ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হালখাতার বিকিকিনি বেহাল করোনায়

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২০
হালখাতার বিকিকিনি বেহাল করোনায় হালখাতার বিকিকিনি বেহাল করোনায়। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: করোনাকালে নববর্ষ পড়ায় এবার বেহাল অবস্থা হালখাতার বিকিকিনিতে। দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জকে ঘিরে প্রতিবছর এমন দিনে জমজমাট থাকতো হালখাতার চিরচেনা কিছু বাইন্ডিং হাউস। প্রতিবছরের চাহিদা মাথায় রেখে নানা আকারের হালখাতা এবছর তৈরি করলেও ক্রেতার দেখা তেমন মিলছে না।

চৈত্রের শেষদিন সোমবার (১৩ এপ্রিল) নগরের বকশিরহাট, খাতুনগঞ্জ, আন্দরকিল্লা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

খাতুনগঞ্জের এশিয়া মার্কেটের তেল চিনির আড়ত মা এন্টারপ্রাইজের ঝন্টু সাহা হালখাতা কিনেছেন বকশিরহাটের ৩৬০ চাঁন্দমিয়া মার্কেটের এসবি বাইন্ডিং হাউস থেকে।

তিনি জানান, দেড় দিস্তার দুইটি হালখাতা নিয়েছে ৭০০ টাকা। গত বছরের চেয়ে দাম একটু বেড়েছে।

তার সঙ্গে আসা আরেকজন ক্রেতা জানান, গত বছর ৪টি হালখাতা নিয়েছিলাম ১ হাজার ৩৭০ টাকায়, এবার একই সমান খাতার দাম নিলো ১ হাজার ৬০০ টাকা।

এসবি বাইন্ডিং হাউসের মালিক প্রণব রঞ্জন ঘোষের ছেলে রাহুল ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন জেলা উপজেলার ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর আমাদের হালখাতা নিয়ে যেতেন। এবার করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ, এমনকি খাতুনগঞ্জেও অনেক দোকান বন্ধ, বড় বড় বিপণীকেন্দ্র বন্ধ, জুয়েলার্স বন্ধ। তাই বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে।

তিনি জানান, সারা বছর দুইজন কারিগর হালখাতা, রাফখাতা, লেজার, লেজার ডে বুক, সুপার রয়েল ডে বুক, ক্যাশ বুক, রেজিস্টার ইত্যাদি তৈরি করে। কিন্তু নববর্ষের কয়েক মাস আগে থেকে ৫-৬ জন কারিগর কাজ করেন।

পাশেই দীপক রঞ্জন ঘোষের নিউ খাতা ঘর। ছোট্ট দোকানে বসে আছেন তিনি। একজন কারিগর লাল, সবুজ সালু কাপড় দিয়ে হালখাতা বানাচ্ছেন।

ব্যবসার কথা জানতে চাইলে চোখ ছল ছল করে দীপক রঞ্জনের। বললেন, কাটাপাহাড়ে বদর উদ্দিন মার্কেটে আমার বাবার দি খাতা ঘর নামে একটি দোকান ছিলো ১৯৫৫ সাল থেকে। বাবা স্বদেশ রঞ্জন ঘোষের কাছেই বাঁধাইয়ের কাজ শিখেছি।

চট্টগ্রামে আমরা তিন ভাইয়ের তিনটি বড় দোকান ও বকশির হাটের মুখের কৃষ্ণবাবুর কর্ণফুলী বাইন্ডিং হাউস হালখাতার জন্য বিখ্যাত। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত আমাদের তৈরি হালখাতা ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। ১৯৮৫ সাল থেকে নিজে দোকান চালাই। কিন্তু এবারের মতো বেহাল ব্যবসা জীবনে কোনো দিন দেখিনি।

দূরের জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কেন হালখাতা কিনেন জানতে চাইলে বলেন, আমরা যত্ন করে বাইন্ডিং করি খাতা। ঢাকার চেয়ে আমাদের খাতার মান ভালো। তাছাড়া অনেক বছর থেকে খাতুনগঞ্জের সঙ্গে সিলেট, উত্তরবঙ্গের ব্যবসা চলে আসছে। অনেক ব্যবসায়ী, ট্রাকচালকের যোগাযোগ থেকে একটি যোগসূত্র হয়ে গেছে।

তিনি জানান, প্রতি বছরের চাহিদা অনুযায়ী এবারও কাগজ কিনেছি, কাপড় কিনেছি, কারিগর বায়না করেছি, লেজার প্রিন্ট করেছি কিন্তু লাভ দূরে থাক বিক্রিই তো হচ্ছে না। কীভাবে হবে মহামারীর জন্য সব দোকানপাট বন্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২০
এআর/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।