এদের একজন খুলনার রবিন। সাত্তারের বাগানের ফুল পছন্দ হলো তার।
ওপাশ থেকে খুলনা থেকে রবিনের মালিকের ফোন। জানতে চাইলেন সাত্তারের বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে কিনা। সাত্তারও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন নতুন। রবিনের মালিক সাত্তারকে বোঝালেন, এতো টাকা বহন করা তার জন্যও অসুবিধা, আবার সাত্তার যে বাড়ি নিয়ে যাবে তাতেও থাকে ঝুঁকি। তারচেয়ে ভালো বিকাশ। সাত্তারও লুফে নিলেন। বিক্রি হয়ে গেলো তার ফুল, টাকা থেকে গেল বিকাশ অ্যাকাউন্টে, যা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতোই।
এমন গল্প প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের আনাচ-কানাচে। চাষি, কৃষক, জেলে সবাই ঢুকে যাচ্ছে ডিজিটাল মানির সার্কেলে। যাকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল ইকো সিস্টেম, যার মাধ্যম টাকা আদান-প্রদান-সঞ্চয় করার মাধ্যম বিকাশ।
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল ডিভাইস মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সব শ্রেণীর মানুষকে ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত করেছে বিকাশ। যার আওতায় এখন ২ কোটি ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক। প্রতিদিন ১৭-১৮ হাজার মানুষ যুক্ত হচ্ছেন বিকাশের এ ডিজিটাল ইকো সার্কেলে। বাংলানিউজের সঙ্গে গল্প-কথার মুক্ত আলোচনায় বিকাশের ‘বিকাশ’, ডিজিটাল ব্যবহার সম্পর্কে বলছিলেন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদীর।
দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের হাতে মোবাইল আছে। নেটওয়ার্ক কাভারেজ আছে প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকায়। এ সম্ভাবনা ছিল কাজে লাগানোর মতো। কারণ দেশের ভ্যানওয়ালা, রিকশাওয়ালা, কৃষকদের সহজে ব্যাংকিংয়ের আওতায় নেওয়া সহজ ছিল না। সেই কঠিন কাজটি করেছে বিকাশ।
শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও যাচ্ছে টাকা। গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, রিকশাচালকও এখন টাকা বহন করতে চান না, চান বিকাশ। ফিজিক্যাল মানি থেকে ডিজিটাল মানি কনসেপ্টে চলে যাচ্ছে তারাও। সাধারণ মানুষের অভাবনীয় সাড়াই প্রমাণ করলো মানুষ সহজলভ্যতা, গতি, নিরাপত্তা পছন্দ করে। তাদের পক্ষে সাধারণ ব্যাংকিং করা সম্ভব নয়, কিন্তু বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেখে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসা সম্ভব। কামাল কাদীর বলছিলেন নিজের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে।
ডিজিটাল মানির ছোট্ট একটি উদাহরণ দিলেন কাদীর। ‘ধরুন অনলাইনের জন্য দিনাজপুরের একটি ছবি দরকার। কিন্তু ছবিটি তুলতে যে খরচ হবে, তা আপনার প্রতিনিধির কাছে নেই। টাকা পাঠাতে পাঠাতে লেগে যাবে ৩-৪ দিন। ততক্ষণে শেষ আপনার ছবির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বিকাশ ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়ে কাজটি করে ফেলা সম্ভব। এটাই ডিজিটাল মানির ব্যবহার।
ডিজিটাল মানি ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন দেওয়া হচ্ছে। সংখ্যায় কম হলেও শুরু হয়েছে। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন পেমেন্টে যদি ডিজিটাল মানিতে করে তাহলে এটি আরও প্রসারিত হবে।
মোবাইল মানি যাকে ডিজিটাল মানি বলছি, এর ব্যবহার বহুবিধ। কেনাকাটার জন্য এখন আর পকেটে মানি ব্যাগ থাকা লাগে না, থাকা লাগে না কচকচে টাকার নোট, বহন করার লাগে না বান্ডেল বাঁধা টাকা- একটি বিকাশ ওয়ালেট থাকলেই সব হয়। কোনো ঝুঁকিও নেই। কেনাকাটায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে ডিজিটাল মানি। দেশজুড়ে ২৫ হাজার দোকানে কেনাকাটা করা যায় বিকাশের মাধ্যমে। মোবাইলে হঠাৎ টাকা ফুরিয়ে গেলেও সমস্যা নেই। বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকলে এয়ারটাইম কিনে নেওয়া যায় সহজে।
ডিজিটাল মানির এ ব্যবহার গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনীতিতে এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। তারা এখন টাকা জমানোর কথা ভাবে। পকেটে বেশি টাকা নিয়ে ঘুরতে হয় না, জমানোর জন্য রাখতে হয় না কৌটা, ব্যাংকের মধ্যে। কারণ গ্রামের সেই ফুলচাষির কাছেও আছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট, ডিজিটাল মানি।
** বিকশিত বিকাশের গল্প
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এএ