ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন পচে ২৫২ কোটি টাকার ক্ষতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১১ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন পচে ২৫২ কোটি টাকার ক্ষতি টানা বৃষ্টিতে পচে গেছে সয়াবিন গাছ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে টানা ছয়দিনের ভারী বর্ষণে প্রায় ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির সয়াবিন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে গাছ মরে ও সয়াবিন পচে কৃষকদের প্রায় ২৫২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর ক্ষতির মুখে পড়া কৃষকরা পুঁজির অভাবে আগামী আমন মৌসুমে ধান আবাদ ব্যহত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে ৯২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমির রবি ফসল পানির নিচে ডুবে যায়। এর মধ্যে ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির সয়াবিন পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সম্প্রতি কমলনগর উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সয়াবিন গাছ এখনও পানির নিচে। এতে সয়াবিন পচে গেছে।  

এদিকে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর রোদে পানি কমতে শুরু হওয়ায় গাছ মরে যাচ্ছে। জেলার রামগতি, রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে একই খবর পাওয়া গেছে।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, টানা ছয়দিনের বৃষ্টিতে সয়াবিনের মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন পানির নিচে থাকায় গাছে থাকা কাঁচা সয়াবিন পচে গেছে। ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি সরতে না পারায় গাছ মরে যায়। যেসব জমিতে রবি মৌসুমের শুরুতে সয়াবিনের চাষ করা হয়েছে ওইসব জমি থেকে সামান্য কিছু সয়াবিন ঘরে তোলা যাবে। যদিও তার পরিমাণ প্রত্যাশিত সয়াবিনের তিন ভাগের এক ভাগ। বাকি দুই ভাগ ঘরে তোলার আগে পানিতে পচে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াইশ’ কোটি টাকারও বেশি। সয়াবিন গাছ হাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

কমলনগর উপজেলা চর মার্টিন এলাকার কৃষক আলী হোসেন জানান, ২৫ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। ক্ষেতেই সয়াবিন পচে যাওয়ায় ফলনের ১০ ভাগের এক ভাগও ঘরে তোলা সম্ভব হবে না। এতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। কৃষক আলী হোসেনের মতো একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে জেলার প্রায় সব কৃষককে।

কমলনগর উপজেলা উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছালেহ উদ্দিন পলাশ বলেন, টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গাছ মরে গেছে। গাছে নিচের অংশের সয়াবিন পচে গেছে। ভাগ্যে থাকলে উপরের কিছু অংশের সয়াবিন পাওয়া যাবে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২শ’ কোটি টাকা।  

তবে বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বাদাম, মরিচ, ডাল ও তরমুজসহ অন্যান্য রবি ফসল বাদে কেবলমাত্র সয়াবিনের ক্ষতি প্রায় ২৫২ কোটি টাকা।

লক্ষ্মীপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে মোট ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রামগতিতে ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর, কমলনগরে ১৬ হাজার ৩১০ হেক্টর, রায়পুরে ৭ হাজার ৯৬০ হেক্টর, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর ও রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়।  

গত বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলে টানা ছয়দিন। এতে রামগতি উপজেলার চর সীতা, চর বাদাম, আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চর আবদুল্লাহ, কমলনগর উপজেলার চর ফলকন, চর জাঙ্গালিয়া, চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেন্স, চর কাদিরা, চরবসু, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবনীগঞ্জ, চর উভুতি, আবিরনগর, লাহারকান্দি চর রমনিমোহন; এছাড়াও জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ডুবে যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।