খাত-সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা মনে করেন, পদত্যাগ করলে অদূর ভবিষ্যতে অন্য কোনো ব্যাংকে কাজ করার সুযোগ থাকবে তার জন্য। কিন্তু পদত্যাগ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে অপসারণ করবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কেউ যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে ব্যর্থ হন তাহলে তার নিজে থেকেই উচিত পদত্যাগ করা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তো বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর (সেনসেটিভ) । কারও বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক নোটিশ দেওয়ার পরই তার উচিত পদত্যাগ করা।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৩ জুন যাত্রা শুরু করেছে চতুর্থ প্রজন্মের দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর সোমবার (২৭ নভেম্বর) ব্যাংকটির বিশেষ পর্ষদ সভায় পদত্যাগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করে এখন ঋণ আদায় করতে পারছে না নতুন এই ব্যাংক। ফলে বড় ধরনের তারল্য সংকট বা নগদ মুদ্রার সংকট তৈরি হয়েছে। আবার আমানত সংগ্রহেও তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছে না দি ফারমার্স ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকায়। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মার্চ-জুন প্রান্তিকে খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা।
সবকিছু মিলিয়ে সীমাহীন তারল্য সংকটে পড়ে ৩০০ কোটি টাকা নগদ আমানত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পায়নি ফারমার্স ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো বা পুন:ক্রয়চুক্তির মাধ্যমে ৯৬ কোটি টাকা জোগান দেয় ব্যাংকটিকে।
তারপরও গত বৃহস্পতিবার নিয়ম মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআরআরের এবং এসএলআরের অর্থ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এর আগে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যাংকটিতে রাখা তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ আমানত সুদাসলে তুলতে গেলে কয়েক দফায় চেক ডিজঅনার হয়। পরে তাদের ২৫ কোটি টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী রোববার (২৬ নভেম্বর) দি ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকে কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকে তারল্য ব্যবস্থাপনা করতে এমডি ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে নগদ জমা বা সিআরআরের এবং সংবিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআরের অর্থ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নতুন করে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এমডিকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে এমডিকে সাত কর্মদিবস পরে অপসারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা ৪৬ (৩) এর (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী অপসারিত হলে তিনি উক্ত আদেশের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানী বা অন্য কোন ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে,সংযুক্ত হতে বা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না৷
তিনি পদত্যাগ করবেন নাকি অপসারিত হবেন জানতে চেয়ে দি ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বেশ ক’বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
২৭ নভেম্বর রাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে দি ফারমার্স ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুনর্গঠিত পর্ষদ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এ অবস্থায় আমানতকারি এবং আন্তঃব্যাংক অংশগ্রহণকারি সকল ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতা ও অব্যাহত রাখার আহ্বান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এসই/জেএম