ভিড়ের কারণে দর্শনার্থীরা টাকা গুণে না নেওয়ায় পরে মালামাল কিনতে গিয়ে বুঝতে পারছেন নিজে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমনই প্রতারণার প্রমাণ এসেছে বাংলানিউজের হাতে।
রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রতারণার এ চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেইন গেটে ২৭টি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। প্রতিটি কাউন্টারে কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে। কোনো দর্শনার্থী ৫০০ বা ১০০০ হাজার টাকা দিয়ে একটি টিকিট কাটলে তাকে ১০০ টাকা কম দিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে ৩৭০ টাকা বা ৮৭০ টাকা।
শারমিন আরা জামান নামে এক দর্শনার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমার নিজের স্টল আছে বিধায় প্রতিদিন আসতে হয়। কিন্তু প্রথমে বুঝতে পারিনি প্রতিনিয়ত আমি প্রতারণার শিকার হচ্ছি। শনিবার এ বিষয়ে মেলায় অবস্থিত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) অফিসে বললে তারা আমাকে বলে লিখিত অভিযোগ করেন, তদন্ত হবে। পরে দেখা হবে। আজও আমাকে ১০০ টাকা কম দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার পিএসকে দিয়ে ২৬ নম্বর কাউন্টারে টিকিট কাটাতে ৫০০ টাকা দিলে কাউন্টার থেকে ৩৭০ টাকা দেওয়া হয়। পরে তাদের বলেও টাকা ফেরত পাইনি।
একই পরিস্থিতিতে পড়েন জেসমিন নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, আমি এক হাজার টাকা দিলে একটি টিকিটসহ আমাকে ৮৭০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। পরে সাংবাদিকের সহযোগিতায় আমার ১০০ টাকা ফেরত পায়।
এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে এ প্রতিবেদক নিজে ২৩ নম্বর কাউন্টার থেকে ৫০০ টাকার নোট দিয়ে একটা টিকিট কাটলে কাউন্টার থেকে ৩৭০ টাকা তাকে ফেরত দেওয়া হয়। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ১০০ টাকা দ্রুত ফেরত দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ২০ থেকে ২৭ নম্বর কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যেহেতু কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় তাই তাদের কমেন্ট নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মেইনগেটে দায়িত্ব পালন করা শহিদুল হক জীবন বলেন, এ ধরনের প্রতারণার কথা আমাদের জানা ছিলো না। তবে তাকে প্রমাণ থাকার কথা জানালে মুহূর্তের মধ্যে দুইজনকে দেওয়া আইডি কার্ড কাউন্টার থেকে তিনি নিয়ে নেন। তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রতারণাকে আশ্রয় দেব না। আমরা সবাই মিলে কাজ করতে চায়।
তবে এর আগে অভিযোগ এলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলায় সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মকবুল হোসাইন বলেন, এমন অভিযোগ জানা ছিলো না। তবে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে কথা বলতে গেলেও কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তাই অধিদফতরের কোনো কমেন্ট নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইপিবির তথ্য অনু্যায়ী, মাসব্যাপী এ মেলা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এবারই প্রথম মেলার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে রয়েছে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি।
এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হলো-থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯
ইএআর/আরআর