এ এলাকার কৃষকরা সাধারণত স্থানীয়জাতের দেরিতে পরিপক্ক এবং কাটা হয় এমন ধানের আবাদ করে থাকেন। এসব জাতের ফলন অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাতের তুলনায় অনেক কম।
পতিত জমিতে গম ও সূর্যমুখী চাষে কৃষকরা বিঘা প্রতি ৬-৮ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন বলে গবেষকদের আশাবাদ।
অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ (এসিআইএআর) এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের যৌথ অর্থায়নে খুবিসহ বাংলাদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান দু’টি সমন্বিত গবেষণা প্রকল্পে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে উপ-গবেষক সহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার বলেন, প্রথম প্রকল্পে আমরা নির্বাচন করার চেষ্টা করেছি যে, এখানে রবি মৌসুমের কোন কোন ফসল চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত এবং এ পরিবেশে টিকে থাকবে কিনা। আমরা অনেকগুলো ফসল নিয়ে কাজ করেছি। যেমন- গম, সরিষা, সূর্যমুখী, ভুট্টা, মটর ইত্যাদি। এদের মধ্যে সূর্যমুখী ও গম (তিন বছর) সফলভাবে চাষ করা সম্ভব হয়েছে। এরপর সূর্যমুখী ও গমের সার ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য চাষাবাদ কৌশল নিয়ে আমরা দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, সূর্যমুখী এমন একটি ফসল যা এই লবণাক্ত অঞ্চলে হচ্ছে, এর ফুল ধারনের উপর দিনের দৈর্ঘ্যের কোনো প্রভাব নেই, মৌসুমে এর কোনো প্রভাব নেই, দেরিতে লাগালেও হচ্ছে। এর মূল মাটির গভীর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না লাগালে ফুল ফুটবে না, এমন কোনো বিষয় নেই। এজন্য এটি বরি, খরিফ-১ এবং খরিফ-২ এই তিন মৌসুমেই করা যাবে। তবে বরি মৌসুমে এর ফলন বেশি। এতে করে কৃষক এবং সর্বোপরি সরকার লাভবান হবে। কাজেই সূর্যমুখী এ অঞ্চলের জন্য একটি কার্যকরী ফসল বলে আমি মনে করি।
মুখ্য গবেষক অ্যধাপক ড. মো. এনামুল কবীর বলেন, সূর্যমুখী ও গম যে এখানে হয় এবং হবে তা বিগত কয়েক বছরের গবেষণায় আমরা সুনিশ্চিত। রোপা আমন কাটার পর মাটিতে যে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকে এই অবস্থায় মাটিতে বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম দিলে সেটা গজাচ্ছে। কিন্তু অন্য ফসল সেটা সহ্য করতে পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মারা যায়। রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ও গমচাষের নতুনপ্রযুক্তি (সার, পানি, লবণাক্ততা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা) কৃষকদের দিতে পারলে এই এলাকায় রোপা আমনের সঙ্গে তারা অতিরিক্ত একটি ফসল পাবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে। সূর্যমুখী চাষে ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণেও ভূমিকা পালন করবে এবং কৃষকরা নিজেরাও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করতে পারবে।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলে সূর্যমুখী ও গমের ভালো ফলন পেতে উচ্চ ফলনশীল এবং স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন আমন ধান একটু আগে লাগিয়ে এবং একটু আগে কেটে মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকা অবস্থাতেই বিনা চাষে সূর্যমুখীও গমের বীজ বপন করলে এমনকি সূর্যমুখীর চারা রোপণ করেও চাষ করা যায়। এতে করে লবণাক্ততা তীব্র হওয়ার আগেই ফসল কাটার উপযোগী হয়।
এ গবেষক জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন গাইডে সূর্যমুখীর কোনো ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন এ অঞ্চলের জন্য নেই। এই প্রকল্প দু’টির সফল সমাপ্তির পর এই অঞ্চলের জন্য সূর্যমুখী এবং গমের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য চাষাবাদ কৌশল প্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
এছাড়াও পানখালির কৃষক শংকর প্রসাদ বলেন, সূর্যমুখী ও গম চাষের ফলে আমরা রোপা ধানের সঙ্গেও অতিরিক্ত একটি ফসল পাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও পাবো। এই সূর্যমুখী এবং গম চাষের ফলে আমরা লাভবান হবো এবং তাতে আমরা অনেক খুশি।
বাংলাদেশসময়: ০৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস