শুক্রবার (১৮ মে) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের কুমোদপুর গ্রামের নারী-পুরুষরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাঁশের তৈরি চাঙ্গাড়ি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কেউ রাস্তার পাশে, কেউ আবার বাড়ির উঠানে বসে চাঙ্গাড়ি বানাচ্ছেন।
প্রথমে হাট থেকে বাঁশ কিনে চাটাই তৈরি করা হয়। পরে চাটাই শুকানোর পর কল্লা (ঝুড়ির গলা) তৈরি করতে হয়। কল্লা শুকানোর পর বেত তৈরি করতে হয়। চাটাই, কল্লা আর বেত শুকানোর পর চাঙ্গাড়ির মূল অংশ বানানোর কাজ শুরু হয়। কুমোদপুর এলাকার চাঙ্গাড়ি কারিগর কীর্তন চন্দ্র মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২০ বছর ধরে চাঙ্গাড়ি বানাচ্ছি। আগের মতো এখন আর চাঙ্গাড়ি বিক্রি হয় না, প্লাস্টিকের ঝুড়ি বাজারের বের হওয়ায় আমাদের বানানো চাঙ্গাড়ির চাহিদা কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চাঙ্গাড়ি বানাচ্ছি, তাতে বিপদ একটু বেশিই। ঝড় আর তুফান নেই, এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে পাইকারদের ধমক সহ্য করতে হবে। সরকার যদি আমাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে দিতেন। তাহলে আমরা তাদের হাত থেকে মুক্ত হতে পারতাম এবং আরও ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারতাম।
আরেক চাঙ্গাড়ি কারিগর তারাচাঁন চন্দ্র মণি দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১৯৭১ সাল থেকেই এই চাঙ্গাড়ি বানাই। তখন এর কদর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তণে চাঙ্গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন চাঙ্গাড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসের কদর বেড়েছে। যেসব কাজে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যায় না, সেসব কাজে এখনও বাঁশের তৈরি চাঙ্গাড়ি ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কাজ করতে হয়। আর সেই সুযোগে তারা আমাদের হাতের তৈরি চাঙ্গাড়ি কম দামে কিনেন। তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব চাঙ্গাড়ি বিক্রি করে থাকেন।
কুমোদপুর গ্রামের চাঙ্গাড়ি কারিগর কালীচরণের স্ত্রী প্রমিলা রানি বাংলানিউজকে বলেন, গৃহস্থালির কাজের পর যেটুকু সময় পাই, সেটুকু সময় চাঙ্গাড়ি বানানোর কাজে ব্যয় করি।
চাঙ্গাড়ির পাইকার বাসুদেব মণি দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমি এই কুমোদপুর থেকে বাইগুনি, ডবলসহ আড়াই হাত নামে বিভিন্ন বাঁশের তৈরি চাঙ্গাড়ি কিনে ঢাকার কারওয়ানবাজার, হেমায়েতপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুমোদপুরে সাপ্লাই দিয়ে থাকি। এখানকার চাঙ্গাড়ি কারিগরেরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক দুর্বল, সরকারিভাবে তাদের যদি সুদমুক্ত লোনের ব্যবস্থা করা যায়, তবে তারা এ কাজে প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে কাজ করবেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, আমি জানতে পেরেছি আটিগ্রামের কুমোদপুরে ১শ ঘরের বেশি পরিবার বাঁশের তৈরি চাঙ্গাড়ি তৈরি করছে। তারা যে সুদমুক্ত লোনের বিষয়টি বলেছেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে যতটুকু করা সম্ভব তাদের সহায়তা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৯
এএটি