ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চলছে দর-কষাকষি, ঢাকায় গরু মিলছে না ৬০ হাজার টাকার কমে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৯
চলছে দর-কষাকষি, ঢাকায় গরু মিলছে না ৬০ হাজার টাকার কমে পশুর হাটে গরু, ছবি: বাংলানিউজ

রাজধানীর পশুর হাট ঘুরে: পবিত্র কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঢাকার একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীসহ অস্থায়ী হাটগুলোতে আসছে কোরবানির পশু। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে এসে ভরছে হাট। তবে রাজধানীর সব হাটে আকার অনুযায়ী গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে বলছেন ক্রেতারা। যেকারণে বেশ চলছে দর-কষাকষি। গরু দেখাদেখি হচ্ছে কিন্তু সেভাবে বেচাকেনা শুরু হয়নি। একইসঙ্গে ঢাকার হাটগুলোতে ৬০ হাজার টাকার কমে গরু মিলছে বলেও জানাচ্ছেন ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আরও সময় নিচ্ছেন ক্রেতারা। তারা গরু দেখছেন।

দর-দাম করছেন।

আর ক্রেতারা বলছেন, এবার গরুর দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তাই যাচাই-বাছাই করে আজ বা কাল পশু কিনবো।

হাটগুলোতে চলছে ব্যাপারী ও ক্রেতার মধ্যে মধুর ‘দোষারোপ’। গরুর দাম নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ- গরুর দাম তুলনামূলক বেশি চাওয়া হচ্ছে। হাটে সর্বনিম্ন ৮০ কেজি মাংস হবে এমন গরুর দামও ৬০ হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে।

ব্যাপারীদের দাবি, গো-খাদ্যের দাম বেশি। ফলে গরুর দামও বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি ভুসি ৩৭ টাকা। গমের আটার কেজি ২৫ টাকা।

বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) মিরপুর-১৪ নম্বর পশুর হাট, কচুক্ষেত বাজার (রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট ও শাপলা চত্বর), মোহাম্মদপুর বসিলা ও আফতাবনগর হাট ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

ফরিদপুর নগরকান্দার কৃষক কাওসার হোসেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি গরুও পালেন। তিনটি ছোট মাঝারি দেশি গরু মিরপুর-১৪ নম্বর মোড়ের হাটে তুলেছেন। শুধু কাওসার নন, একই এলাকার আরও ১০ জন মিলে এক ট্রাক দেশি গরু এ হাটে তুলেছেন বাড়তি দামের আশায়। তিনটি গরুর মধ্যে ছোটটির ওজন ৮০ কেজি আর বড় গরুর ১৬০ কেজি। ৮০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ হাজার। অন্যদিকে, ১৬০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে গরুটির দাম এক লাখ ৪০ হাজার।

নিজের গরুর দাম প্রসঙ্গে কৃষক কাওসার বাংলানউজকে বলেন, দাম চাচ্ছি ৭৫ হাজার, ৬০ হাজার হলে বিক্রি করবো। ক্রেতা আসছে। দামে হচ্ছে না। আশা রাখছি শুক্রবার হাট জমবে। এখন দেখার মানুষ বেশি। দাম যা চাই, তার অর্ধেক বলছেন ক্রেতারা।

কোরবানির পশু সাধারণত ঈদের দুই দিন আগ থেকে বেচাকেনা হয় রাজধানীতে। ঢাকা শহরে অধিকাংশ মানুষই ভাড়া ও ফ্ল্যাট বাসায় বসবাস করেন। কোরবানির গরু রাখার স্থানের বড় সংকট। মিরপুর-১৪ নম্বর মোড়ের হাটে দুইদিনে মাত্র সাতটি গরু বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর নতুন বাজার থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর হাটে গরু দেখতে এসছেন আওলাদ শেখ। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দুই ছেলে আরিফ হোসেন শেখ ও ফাহিম হোসেন শেখকে। গত দুইদিন ধরে গাবতলীসহ বেশ কয়েকটি হাটে ঘুরছেন তিনি। তবে এখনও দামে-দরে মেলেনি তার।

বাংলানিউজকে আওলাদ শেখ বলেন, বেশি চাওয়া হচ্ছে। গত কোরবানির চেয়ে গরুর দাম ৩০ শতাংশ বেশি চাওয়া হচ্ছে। দামে-দরে মিলছে না। আরও কিছু হাট দেখবো। আল্লাহ কপালে যা রাখছে, সেটাই কোরবানি দেবো।

এছাড়া আফতাবনগর হাটেও দেশি গরুর দাম চড়া। দেড় থেকে দুই মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। হাটে ৮০ থেকে এক লাখ টাকার গরুর চাহিদা বেশি। এই হাটে অধিকাংশ কোরবানির পশু কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছে। এ হাটেও জমে উঠেছে দর-কষাকষি। তবে সব হাটের মতো এখানেও প্রায় ৬০ হাজারের নিচে কোনো গরু নেই।

মগবাজার মধুবাগ থেকে আফতাবনগর হাটে এসেছেন শফিকুল ইসলাম। কোরবানির পশুর দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাজেট ৮০ হাজার টাকা। এই দামে পছন্দের গরু মিলছে না। গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে।

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা পাবনার এক ব্যাপারীর পাল্টা যুক্তি, গরু কেনাই বেশি; ৬০০ টাকা কেজি। আমরা কীভাবে দেবো। গরু পালতে গিয়ে আমরা পাগল হয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টির দিনে গরু পালা যে সমস্যা। এখন কীভাবে দেবো। গরুর তুলনায় কম দাম বললে আমরা কী করে দেবো। এরপর আবার গরু প্রতি ট্রাক ভাড়া আছে দুই হাজার টাকা।

কচুক্ষেত হাটেও চলছে দর-কষাকষি। কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে মাত্র একটা গরু হাটে নিয়ে এসেছেন আনারুল ইসলাম। ১০০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে এমন গরুর দাম হাঁকছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। গরুর বয়স দুই বছর। দাঁতও উঠেছে দুইটা।

গরু বেচাকেনা প্রসঙ্গে আনারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করছে আর চলে যাচ্ছে। গরু বেচাকেনা লাগেনি এখনও। ঢাকার মানুষ ফ্ল্যাট বাসায় থাকে; এতো আগে গরু নিয়ে রাখবে কোথায়।

গরুর দাম নিয়ে তিনি বলেন, গরুর খাবারের যে দাম ৬০ হাজারের বেশিই প্রায় সব গরু। ৬০ এর কমে গরু নেই।

এদিকে, হাটের পরিবেশ দেখে খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা। গরুর জন্য খাবার পানি এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া হাটে ২৪ ঘণ্টাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কচুক্ষেত অস্থায়ী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ইসহাক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাটে এক হাজার কোরবানির পশু এসেছে। বেচাকেনা এখনও তেমন শুরু হয়নি। ঈদের দুইদিন আগে জমজমাট বেচাকেনা হবে। হাটের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। গরুর জন্য গোসল ও খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো হাটে লাইটিং করা হয়েছে। রয়েছে নিষ্কাশন ব্যবস্থাও। হাটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় সতর্ক রয়েছে। তারা সাদা পোশাকেও নজরদারিতে আছে হাটে।

গরুর দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সব জিনিসের দাম বাড়ছে। বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। তাই গরুর দামও বাড়তি গত কোরবানির থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।