গত ১৮ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে পিইসির সভায় ‘মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার পর এর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে বলা হয়। ।
সভার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাত্র ৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) বাবদ ২০ কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা উঠলে এটিকে অবান্তর বলে উল্লেখ করা হয়। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রস্তাবকৃত ২০ কোটি টাকা ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে প্রকল্পে ভ্রমণ বাবদ যে এক কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে যৌক্তিকতা জানাতে বাপাউবো অপারগ হলে সেটিও বাতিল করে ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্রটি জানায়, ৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণকাজ বাবদ ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। সে হিসেবে প্রতি মিটার নদী খননে ব্যয় পড়বে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এই ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন ওঠে বৈঠকে। প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণ বাবদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বাপাউবো। অথচ কোন দেশে ভ্রমণে যাবে কেন যাবে কত জন যাবে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। তুলে ধরা হয়নি এক কোটি টাকা খরচের যৌক্তিকতাও। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ হয় সভায়। প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ এক কোটি টাকা সংস্থান রাখার প্রস্তাব করা হয়। এমন প্রস্তাবের কারণ, কতজন ও কোন দেশে প্রশিক্ষণ নেবে তা-ও উল্লেখ করতে বলা হয় ডিপিপিতে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সম্মানী ভাতা বাবদ ৫ লাখ, জরিপ বাবদ ৫ লাখ, মোটরযান মেরামত বাবদ ৫ লাখ, মধ্যমেয়াদী মূল্যায়ন বাবদ ৮ লাখ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বাবদ ১ লাখ, বৃক্ষরোপণ বাবদ ১০ লাখ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। একটি ডাবল কেবিন পিকআপ বাবদ ৫৬ লাখ, দু’টি মোটরসাইকেল বাবদ ৩ লাখ, পেট্রোল বাবদ ৬ লাখ ও অন্যান্য মনিহারি বাবদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, নদী খননের সম্ভাব্যতা যাচাই বাবদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। এটা আমরা বাদ করে দিয়েছি। প্রকল্পের প্রতিটা টাকা খরচের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রকল্পের প্রতিটা খাতে যেন বাড়তি বরাদ্দ না দেওয়া হয়। সেই আলোকে শুধু এই ড্রেজিং কাজে নয়, যে কোনো প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখন অনেক সচেতন।
কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের এ সদস্য বলেন, আমি সব বিষয় জাস্টিফাই করে দেখবো। যদি সংশ্লিষ্টরা খরচের বিষয়ে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য না দিতে পারে তবে সঙ্গে সঙ্গে বরাদ্দ বাতিল। বিদেশে কেন ভ্রমণ করতে হবে? জনগণের টাকায় শুধু শুধু ভ্রমণ নয়। কারণ যদি সন্তোষজনক না হয় তবে ভ্রমণ করে লাভ কী? জনগণের টাকা অপচয় কোনোভাবেই করতে দেওয়া হবে না। ফিজিবিলিটি স্টাডি বাতিল এবং বিদেশ ভ্রমণ বাবদ বরাদ্দের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে পুনরায় প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করে ডিপিপি পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে।
নদীতীর সংরক্ষণ কাজের যৌক্তিকতা ও ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রতিনিধি বলেন, প্রকল্প এলাকার সন্নাসীর চর, বহেরাতলা এবং শিরুইল নামক স্থানে নদীভাঙনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় প্রতিরক্ষা কাজ করা প্রয়োজন। বাপাউবো’র অনুমোদিত নকশা এবং ২০১৮-১৯ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জুলাই ২০১৯ থেকে কার্যকর হবে।
বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পশ্চিম রিজিয়ন) খন্দকার খালেকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় টেকনিক্যাল স্ট্যাডি করা হবে। অনেক সময় প্রকল্পের আওতায় টিএ বিল দেওয়া হয় না। সেজন্যই বিদেশ ভ্রমণ বাবদ এক কোটি টাকা রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/