এ লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় (পরীক্ষামূলক) চারটি খাঁচা বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মিঠা পানির হ্রদ হলো রাঙামাটির ‘কাপ্তাই হ্রদ’।
জনসংখ্যার তুলনায় মাছ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। কিন্তু আশানুরূপ চাহিদা পূরণ করতে না পারায় বিএফডিসি বিভিন্ন উপায়ে হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিকল্প পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ করার। এজন্য চারটি খাঁচাও বানানো হয়েছে। খাঁচাগুলোতে রুই, মৃগেল, কাতাল, পাবদা, তেলাপিয়া,পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা হবে। এজন্য নির্মিত খাঁচাগুলোতে চাষের লক্ষ্যে মাছের পোনা সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা আরও জানান, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কাপ্তাই হ্রদে পাইলট প্রকল্পের আওতায় খাঁচায় মাছ চাষ করবো। যদি সফলতার মুখ দেখি তাহলে পরে আরও খাঁচার সংখ্যা বাড়াবো। আর এ পদ্ধতিটিও মাছ চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। যাতে এ উৎপাদনে তারা এগিয়ে আসে। রাঙামাটি মাছ ব্যবসায়ীদের দাবি, এবছর আমরা তেমন ভালো ব্যবসা করতে পারিনি। দেশে মাছের সংখ্যা কমায় আগের মতো হ্রদ থেকে মাছ আহরণ করা যাচ্ছে না। দিন দিন হ্রদ থেকে মাছের সংখ্যা কমছে। এখন মাছের আকৃতি ছোট হচ্ছে। আসলে জনসচেতনতার অভাব, দূষণ এবং অবৈধভাবে মাছ শিকারের কারণে এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারা আরও জানান, আমরা হ্রদে মাছের সংখ্যা বাড়ার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করেছি। কারণ কাপ্তাই হ্রদের মাছের চাহিদা সারাদেশে রয়েছে। যদি মাছের উৎপাদন বাড়ানো না যায় তাহলে কাপ্তাই হ্রদ তার নিজস্ব গৌরব হারাবে। সরকার হারাবে রাজস্ব। এজন্য কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচানোর জন্য এখনি সময়।
খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতিটি রাঙামাটিবাসীর জন্য নতুন। তবে সফলতা পেলে মন্দ কী। যদি বিএফডিসি মনে করে হ্রদে খাঁচায় মাছ চাষ করে উৎপাদন বাড়াবে তাহলে তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায় বলে যোগ করেন তারা।
বিএফডিসি রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক কমান্ডার (নৌ-বাহিনী) লে. কর্নেল এম তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কাপ্তাই হ্রদে আগের মতো মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। মাছের সংখ্যা দিন দিন কমায় সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ বিএফডিসি বেশ চিন্তিত। হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যে বিএফডিসি নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বিকল্প পদ্ধতি হলো, হ্রদে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ।
এ লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় কিছু টাকা ব্যয় করে স্থানীয় পর্যায়ে চারটি ভাসমান খাঁচা বানানো হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রথম দু’টি খাঁচায় তেলাপিয়া এবং অপর দু’টিতে কালিবাউস, পাঙ্গাস, রুই, কাতাল, মৃগেলসহ বড় প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়া হবে।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো, কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়ানো। যদি সফলতা পাই তাহলে, পরে এ প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, ছোট আকারের এই পাইলট প্রকল্পটি বানাতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি, সফলতা ধরা দেবে।
সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করলে সফলতা পাওয়া যাবে বলেও যোগ করেন তিনি।
১৯৬০ সালে বাঁধ দেওয়ার মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করা হয়। এ হ্রদে বাণিজ্যিকভাবে মাছের উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনকে দায়িত্ব দিয়েছে। এখন লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল এ হ্রদকে ঘিরে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এএটি