খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে অবস্থিত খুলনা কর অঞ্চলের কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায়ের বহুতল ভবনের ছাদ বাগানে এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশের দেখা মেলে। এ বাগানে শুধু কাগজি ও বাতাবি লেবু নয় রয়েছে ঢেড়শ, ডাটা, উচ্ছেসহ নানা রকম সবজি ও বাহারি ফুল।
কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, বাড়ির ছাদে বাগান করার শখ আমার অনেক দিনের। পরিবারের সদস্যদের বিষমুক্ত খাদ্যর যোগান দিতে এ বাগান তৈরি করা। ছাদ বাগানে কাগজি লেবু,বাতাবি লেবু আর ঢেড়শসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রয়েছে। আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। তারপর লেখাপড়া করেছি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কৃষি আমার রক্তে, শিরা উপশিরায়। শখ থেকে বর্তমানে পরিবারের পুষ্টির যোগানও হচ্ছে এই বাগান থেকে।
ভবনের ছাদে ব্যতিক্রমী এ বাগানে প্রচন্ড এ গীষ্মের তাপদহে কোনো গাছে ধরে আছে ফুল, আর কোনো গাছে ধরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফল। তার বাগান জুড়ে থাকা ফলের হাসি শুধু তাকেই অনুপ্রাণিত করেনি, অনুপ্রাণিত করেছে এলাকার সব শ্রেণিপেশার মানুষকে।
খুলনা মহানগরীর রায়ের মহল এলাকার রায়ের মহল কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শেখ শামসুদ্দীন দোহা। তার বাড়ির ছাদ বাগানে রয়েছে আম, তরমুজ, বেদানা, ডালিম, কাগজি ও বাতাবি লেবুর গাছ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক সবজি ও বাহারি সব ফুল গাছ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছুটির দিন ছাড়াও সময় পেলেই বাগানের পরিচর্যা করি। ১৭শ’ বর্গ ফুটের ছাদ বাগানে প্রায় সব ধরনের শাক সবজি আছে। যা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটে যায়।
মহানগরীর গোবরচাকা মেইন রোডে ভাড়া বাসায় থেকে ছাদ বাগান গড়ে তুলেছেন সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লা। তার ছাদ বাগানে রয়েছে, কমলা, মাল্টা, থাই পেয়ারা, কাগজি লেবু, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, আছে সরিষা ফুল, বেলী, নীল কণ্ঠমনি,পুদিনাসহ ড্রাগন ও মসলা গাছ।
হেদায়েত হোসেন মোল্লা বলেন, শখ থেকে ছাদে বাগান গড়ে তুলেছি। কাজের ফাঁকে সময় করে বাগান পরিচর্যা করি। আমার এ বাগানে ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছসহ প্রায় ৪৫ প্রজাতির গাছ রয়েছে।
এছাড়া ২০১৫ সাল থেকে খুলনা মহানগরীর নিরালার ৬ নম্বরে রোডের ৬৬ নম্বর বাসভবনের ছাদে শখের বাগান গড়ে পরিচিতি পেয়েছেন মুর্শিদা আক্তার রনি। তিনি খুলনার মাছ ব্যবসায়ী জব্বার মোল্লার স্ত্রী।
মুর্শিদার বাগানে রয়েছে, কলা, লেবু, আতা, পেঁপে, সফেদা, পেয়ারা, ড্রাগনসহ বেশকিছু ফলের গাছ। প্রতিদিনের সবজির জন্য বাগনে রয়েছে লাউ, বেগুন, পটল, উচ্ছে আর ঝিঙ্গা। আরও আছে, আদা, অ্যালোভেরা, পুদিনাসহ বেশকিছু দেশি-বিদেশি প্রজাতির গাছ।
খুলনা মহানগরীতে এদের মতো অনেকেই শখের বসে ছাদ বাগান গড়ে তুলছেন। এসব বাগানে রয়েছে ফুলের মধ্যে- গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, বেলী, রজনীগন্ধা, নয়নতারা, অফিস ফুল, চন্দ মল্লিকা, জারবেরা, অর্কিড, ক্যাকটাস, রঙ্গল, বিভিন্ন ধরনের বাহারি গাছ। ফলের মধ্যে- আম, পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কুল, জামরুল, কমলা, স্ট্রবেরি, ডালিম, মাল্টা, করমচা, বাতাবি লেবু, সফেদা, আঙ্গুর, জামরুল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। শাকসবজির মধ্যে-টমেটো, শিম, কপি, বেগুন, ঝিঙ্গা, মরিচ, কলমী শাক, পুঁই শাক, লেটুস, বাটি শাক, করলা, বরবটি, শশা, ধুন্দল, বিলাতি ধনে ইত্যাদি।
অন্যদিকে যারা ভাড়া বাসায় থাকেন অথবা একটি ফ্লাটের মালিক, ছাদে বাগান করার সুযোগ নেই তারা তাদের বেলকনিতেই ক্ষুদ্র পরিসরে সুন্দর বাগান গড়ে তুলেছেন। করোনার কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকা সময়টুকু অনেকেই ছাদ বাগানের পরিচর্যার কাজে ব্যয় করছেন। আবার অনেকে ছাদ বাগান থেকে পরিবারের ফল ও শাক সবজির যথা সমান্য যোগানের চেষ্টা করছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছাদ বাগান। খুলনা মহানগরীতে ৩৮০টি ছাদ বাগান রয়েছে। নগরীর বাসা-বাড়ির অসংখ্য ছাদ ভরে উঠছে ফুল, ফল ও সবজির বাগানে।
বাংলাদেশ সময়:০৯৫০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২০
এমআরএম/এইচএডি/