ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় সপ্তাহে দুদিন ব্যাংক খোলা, শুধু রেমিটেন্স গ্রহিতাদের সেবা প্রদানসহ বেশ কিছু দাবি তুলেছিলেন ব্যাংকাররা। ব্যাংকারদের এসব দাবি দাওয়ার আলোচনার মধ্যেই সরকার চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনের প্রণোদনা ও বীমা সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এসব আলোচনার মধ্যেই চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণ ছুটিতে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ব্যাংকের সবধরণের কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসে ১০ কর্মদিবস ব্যাংকে উপস্থিত হলে পাবেন একমাসের বেতনের সমপরিমান অর্থ।
তার একদিন পর ব্যাংকারদের বীমা সুবিধা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যে সকল ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকে গমণপূর্বক স্বশরীরে ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেছেন বা করছেন তারা কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হলে পদমর্যাদা ভেদে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাবেন। মারা গেলে অর্থের পরিমান ৫ গুন বৃদ্ধি করে অনুদান হিসেবে প্রদান করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ব্যাংকারদের জন্য সরকারের এই প্রণোদনা ও বীমা সুবিধা ঘোষণা করার পর সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের শাখাগুলোতে ভিড় করতে শুরু করেছেন ব্যাংকাররা। সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর যেসব কর্মকর্তা অফিসে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তারাও আসতে শুরু করেছেন।
অপ্রয়োজনীয় কর্মকর্তাদের অফিসে না আসার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে কয়েকটি ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীণ অগ্রণী ব্যাংক প্রণোদনা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপকদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ৮ এপ্রিলের আগে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী শাখায় উপস্থিত হয়ে রোস্টার মোতাবেক দায়িত্ব পালন করছেন তারাই প্রণোদনা পাবেন। সীমিত আকারে কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত হয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেক কর্মকর্তা অপ্রয়োজনে শাখায় উপস্থিত হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ফলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল ইসলাম বলেন, সীমিত আকারে ব্যাংক চালু রাখতে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। এই নীতিমালার আওতায় যেসব কর্মকর্তাদের অফিসে আসতে বলা হয়েছিল তারাই প্রণোদনা পাবেন। বাকিরা পাবেন না।
জানা গেছে, ৪ মে পর্যন্ত করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন ব্যাংক কর্মকর্তা। সীমিত আকারে সেবা প্রদানে অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেক ব্যাংকার ও গ্রাহক। কারণ সাধারণ ছুটির শুরুর দিকে ব্যাংকারদের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা খুবই কম ছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাহকদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটিতে অতিরিক্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন না।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও র্প্রিন্সিপাল অফিসার এহতেশামুজ্জামান বলেন, আমাদের ব্যাংকে অতিরিক্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন না। দায়িত্ব পালনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক। তিনি আরও বলেন, রূপালী ব্যাংকের কোনও শাখাওয় অতিরিক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী যাচ্ছেন না। রোস্টারে যাদের নাম আছে তারাই অফিস করছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, কোনো প্রয়োজন ছাড়াই অনেক কর্মকর্তা অফিসে আসছেন। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এটি আমরা প্রত্যাশা করিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৬ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২০
এসই/এমএমএস