এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একরকম অসম্ভব বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। রাজস্ব আদায় সফল করতে রাজস্ব খাতের প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও কর ফাঁকি রোধে দরকারি বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল সরকার। পরে তা কমিয়ে ৩ লাখ ৬০০ কোটি টাকা করা হয়। ওই লখ্য সামনে রেখে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চে) আদায় করা গেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা মাত্র। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় বাকি ৩ মাসে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে রাজস্ব আয় যে কম হবে তা স্পষ্ট। এ অবস্থায় আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থ শুধু চাইলে হবে না, তা সংগ্রহ করতে হবে। আর তার জন্য অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামগ্রিক পরিবেশটা ঠিক থাকতে হবে। এ বছর যে ট্যাক্সগুলো দেওয়া হবে, সেটা ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে আগামী বছর কম হবে। এর মূল কারণ, ব্যাংকগুলো প্রফিট করেনি। অন্যান্য করপোরেট খাতের প্রফিট করার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা লোকসান করছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী বছর কোন বিবেচনায় ৩৬ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরছি সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, আয়-ব্যয়ের বড় বাজেট নির্ধারণ করা হয়। সেখান থেকে হিসাব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভাগে যেটা পড়ে সেটাই সংগ্রহ করা হয়। যাই হোক, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে এবং বাস্তবায়নে যোগ্যও হতে হবে। আর একটু বেশি চাপ দেওয়া যেতেই পারে। কিন্ত যেখানে ২০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতো, সেখানে ৩৬-৩৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দিলে রাজস্ব প্রশাসনের ওপর একটা বিশেষ চাপ সৃষ্টি হয়।
আগামী অর্থবছরে বিপুল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ড সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সবেচেয়ে বেশি ভরসা করা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মুসক-এ। মুসক থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। আয়কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ২০ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ৬৮ শতাংশই আশা করা হচ্ছে পরোক্ষ কর থেকে। এই অর্থবছরে যা ছিল ৬৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানি অপ্রত্যক্ষ করের চাপ সাধারণ মানুষের ওপরেই বেশি পড়ে। এটা আদায় করা সহজ। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ব্যয় করতে হয়। সেই ব্যয়ের ওপর ট্যাক্স রাখা হলে সেটা আদায়ও অনেক সহজ হয়ে যায়।
‘আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা কীভাবে কর ফাঁকি রোধ করতে পারি। প্রত্যক্ষ কর যেটা দেওয়ার কথা, সেটা ঠিক মতো আসছে কিনা সেটার কঠোর নজরদারি করতে পারি। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ওয়েলথ ট্যাক্স এবং ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স ইন্ট্রুডিউস করার বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। ’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আরও জানা যায়, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও কর হার, কর মুক্ত আয়সীমাসহ বড় সব রাজস্ব নীতির বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২০
এসই/এইচজে