ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিদেশিরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পান, দেশিরা টেন্ডারও পান না

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
বিদেশিরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পান, দেশিরা টেন্ডারও পান না

চট্টগ্রাম: দেশে স্টিল দিয়ে অফিস শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ বেড়েছে। ফলে দেশেই গড়ে উঠেছে এ শিল্পের কারখানা। বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে দেশেই তৈরি করা হচ্ছে স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণের প্রায় যাবতীয় সরঞ্জাম। 

কিন্তু দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের নীতির কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ
দেশি শিল্পোদ্যোক্তারা যখন ২৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে স্টিল বিল্ডিং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করছেন, তখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনা শুল্কে স্টিল বিল্ডিংয়ের তৈরি পণ্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছে।

এ অবস্থায় স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতারা দাবি করেছেন, স্টিল বিল্ডিংয়ের তৈরি পণ্য আমাদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে।  

তাদের অভিযোগ, যোগ্যতা থাকলেও স্টিল বিল্ডিংয়ে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি টেন্ডারে অংশ নিতে পারে না। সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনেও এসব দাবি তুলে ধরেছেন দেশের স্টিল ব্যবসায়ীরা।  

তারা বলেছেন, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পে শুল্কমুক্ত সুবিধায় তৈরি পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলে দেশীয় স্টিল শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে করে এ শিল্প থেকে শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি। শুধু তাই নয়, স্টিল ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে এর নেতিবাচক প্রভাব সিমেন্ট শিল্পের ব্যবসায়ও পড়বে বলে মনে করেন তারা।  

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠন ও উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ, উৎপাদন সক্ষমতা ও কর্মসংস্থান ধরে রাখতে দেশি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পকে বাজেটে সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসবিএমএ) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত এ শিল্পের ২৩০টি প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে ২ লাখ, পরোক্ষভাবে ৮ লাখ মানুষ এবং ১ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য জড়িত এ শিল্পের সঙ্গে।

তিনি বলেন, শিল্পের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্প। দ্রুত অকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন ও নিরাপদ হওয়ায় দেশের ৯৯ শতাংশ ফ্যাক্টরি শেড বিল্ডিং বর্তমানে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল দিয়ে তৈরি করছেন উদ্যোক্তারা। প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং সাশ্রয়ী, ভূমিকম্প সহনশীল। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ও কমপ্লায়েন্স মেনে ব্যয় সাশ্রয়ী এবং স্বল্প সময়ে স্থাপনযোগ্য। এ শিল্পের কাঁচামালের ৯৫ শতাংশ চীন থেকে আমদানি হয়ে থাকে। এর জন্য কাস্টম ডিউটি দিতে হয় প্রায় ২৫ শতাংশ। এর বিপরীতে যারা তৈরি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং পণ্য আমদানি করছে, তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে দেশি শিল্পগুলোকে।

আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার নয়, দেশি শিল্পকে সুরক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন চট্টগ্রামের একটি ইস্পাত কারখানার এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইস্পাত কারখানার অবকাঠামো তৈরিতে স্টিল বিল্ডিং পণ্য লেগেছে প্রায় ১৭ হাজার টন। অবকাঠামোর আকার বড় হওয়ায় আমরা চীন থেকে যেমন তৈরি স্টিল স্ট্রাকচার পণ্য এনেছি, তেমনি দেশি শিল্পগুলোর কাছ থেকেও সংগ্রহ করেছি। দেশে যদি বিশ্বমানের পণ্য পাওয়া যায় কোনো উদ্যোক্তাই বিদেশ থেকে আমদানি করবে না। দেশি শিল্পের স্বার্থ সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশি শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে সবার আগে। দেশে প্রি ইঞ্জিনিয়ার্স বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল শিল্পের উৎপাদন ও পণ্যের গুণগতমান উন্নততর হচ্ছে। এ অবস্থায় এ শিল্পকে সুরক্ষা দিতে হবে। তাহলে আমরা প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং রফতানিও করতে পারবো।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বিদেশ থেকে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং সামগ্রী আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে। এর সঙ্গে আমাদের বিনিয়োগ, ব্যাংকঋণ, কাঁচামালের এলসি, শ্রমিকদের মজুরি, পণ্যের গ্যারান্টি, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অনেক বিষয় জড়িত। যদি কম শুল্কে ফিনিশড গুড এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে কোনো চক্র তাহলে ওই শিল্প অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে। এটা দুঃখজনক।

এদিকে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময় দেশি শিল্পকে পরিচর্যা, সুরক্ষা দেওয়ার পক্ষে। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা করলে এর বিকল্প নেই। আমরা দ্রুত শিল্পায়ন চাই, মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন চাই। তবে তা টেকসই হতে হবে।

এসবিএমএ সভাপতি জওহর রিজভী মনে করেন, স্টিল বিল্ডিংয়ে দেশি অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান থাকলেও সরকারি কোনো টেন্ডারে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ শিল্পের বিকাশে সরকারি সব টেন্ডারে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

এসবিএমএ সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে এক অসম প্রতিযোগিতা চলে আসছে। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চহারে কাস্টমস ডিউটি দিয়ে কাঁচামাল আমদানি করলেও বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোনের বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিনাশুল্কে তৈরি পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

'শুধু তাই নয়, আমদানি করা ডিউটি ফ্রি পণ্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারে বিক্রিও করছে। যার ফলে প্রতিযোগিতায় দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ' বলেন রাশেদ খান।

এ অবস্থায় স্টিল বিল্ডিংয়ে দেশীয় যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া এবং শিল্পের বিকাশে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধায় স্টিল অবকাঠামো আমদানি সুবিধা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
এআর/এসএমএকে/টিসি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।