এর আগে, বেশ কয়েকবার এ ফলের চাষ করেও ব্যর্থ হয় অনেক চাষি। তবে এবার বিদেশি এ ফল চাষ করে সফল হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার চাষি মোকাররম হোসেন।
ভিটামিন সমৃদ্ধ আমদানি নির্ভর একটি ফল আনার। প্রতিদিন চীন, ভারত, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে শতশত টন ফল বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করা হয়। তবে এবার দেশেই প্রথমবারের মত চাষ হচ্ছে আনার। চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মোকাররম হোসেন দুই বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেন এ বিদেশি ফলের। ইতোমধ্যে ফলে ফুলে ভরিয়ে তুলেছেন গোটা আনার বাগান। চলতি মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফল বিক্রিও শুরু হয়েছে।
কৃষি উদ্যোক্তা ও আনার চাষি মোকাররম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আনার মূলত ভারতের একটি জাত। বাংলাদেশে বেদেনার তুলনায় মাপ ও স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে আনারে। ইউটিউবের মাধ্যমে এ জাতের গুনাগুন দেখে আগ্রহী হই। তারপর ভারতের একটি কৃষি ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের পরামর্শ মতোই বাগান শুরু করেছি। গত দুই বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে এক হাজার পিস চারা রোপণের কাজ শুরু করি। এরমধ্যে ৮০০ গাছ বেড়ে উঠতে শুরু করে এবং চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তা থেকে ফল উৎপাদন শুরু হয়।
আনার বাগান তৈরিতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। বাজার ভালো থাকলে এ বছর ফল বিক্রি হবে আনুমানিক ৫ লাখ টাকার। এছাড়া গাছের চারা থেকেও বৃহত অর্থ উপার্জনের ভাবনা আছে।
দেশের প্রথম বাণিজ্যিক এই আনার বাগানটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন ভারতের একটি আধুনিক কৃষি ফার্মের একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ। ভারত মহারাষ্ট্রের কৃষি ফার্ম সয়েল চার্জার টেকনোলজির কৃষিবিদ হারসাল মুখেকরের মতে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া আনার চাষের জন্য বেশ কঠিন ছিল। সেই কঠিন কাজটি সহজ করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে হয়েছে। এখন বাণিজ্যকভাবে ফল বিক্রিও শুরু হয়েছে এ বাগান থেকে। যেটা তারা সফল বলে দাবি করছে।
দেশের প্রথম আনারের বাগান। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাগানটির ইতিকথা ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ কারণে আনার বাগান দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতশত মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন বাগানটিতে।
বাগান দর্শনার্থী শাহ আলম আলো বাংলানিউজকে বলেন, ইউটিউব ও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে এ বাগানের সফলতার গল্প শুনেছি। সেই আগ্রহ থেকেই বাগানটি দেখতে এসেছি। চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন সফলতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করছে।
স্থানীয় ও বাগানে কর্মরত আব্দুল আলীম বাংলানিউজকে বলেন, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামটি মূলত একেবারে ভারত সীমান্তঘেষা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আগে মাদক কারবারসহ চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু আনার বাগানটি হওয়াতে অনেকেই এসব অবৈধ ব্যবসা ছেড়ে বাগানটিতে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এখান থেকে উপার্জিত অর্থে জীবিকা-নির্বাহ করছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বাগানটির শুরু থেকে নানা সময় পরামর্শ দিয়ে কৃষি বিভাগ তার পাশে ছিল। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়া আনার বাগানটির উদ্যোক্তা শতভাগ সফল হলে দেশে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। একই সঙ্গে ক্রয়মূল্যও ভোক্তার হাতের নাগালে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এনটি