ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

শিক্ষা

পরিচয়পত্রের গ্যাঁড়াকলে বিসিএস স্বপ্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৭
পরিচয়পত্রের গ্যাঁড়াকলে বিসিএস স্বপ্ন পিএসসি ভবন।

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বাধ্যবাধকতায় বহুল কাঙ্ক্ষিত  সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে অগণিত শিক্ষার্থী। আসন্ন ৩৮তম বিসিএসে আবেদনের শর্তে এনআইডি নম্বর বাধ্যতামূলক করে দেওয়ায় যেনো বাজ পড়েছে তাদের মাথায়।

পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ ও এসএসসি-এইসএসসি’র মতো বেসিক সার্টিফিকেট বা অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় বিসিএস আবেদনে গ্যাঁড়াকলেই পড়েছে ২০১২ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এনআইডি’র আবেদন করা শিক্ষার্থীরা।  

এমনকি নতুন এ নিয়মের খাঁড়ায় পড়ে এর আগে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকেই এবার বঞ্চিত হচ্ছেন বিসিএস আবেদনের সুযোগ থেকে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে দেশের মোট ১০ কোটি ১৮ লাখ ভোটারের মধ্যে  ৯ কোটি ভোটারের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে ২০১২ সাল থেকে যারা ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন, তাদের ন্যাশনাল আইডি এখনো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আসছে ২৫ জুলাই থেকে ফের এনআইডি হালনাগাদ শুরু হবে। এতে আরো ৩৫ লাখ নতুন ভোটার আবেদন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের এই হিসেবে, একে তো এখনো ১ কোটি ১৮ লাখ ভোটার এনআইডি পাননি, তারওপর আসছে হালনাগাদে জমা পড়বে আরো ৩৫ লাখোধিক আবেদন।

তার মানে, প্রায় দেড় কোটি ভোটার এখনো এনআইডি বঞ্চিত। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র। এদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে, যারা শিক্ষা জীবন শেষে বা শেষভাগে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশের স্বপ্ন দেখছেন।

কিন্তু আজন্ম লালিত সেই স্বপ্ন আর আশার গুড়ে বালি পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) এনআইডি অত্যাবশ্যক করার বিকল্পহীন সিদ্ধান্তে। সরকারিভাবে বা নির্বাচন কমিশন থেকে সব কাজে এনআইডি এখনো বাধ্যতামূলক করা না হলেও এ ব্যাপারে অনঢ় অবস্থান নিয়েছে পিএসসি।

এরই মধ্যে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে স্রেফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এনআইডি নম্বর ছাড়া আবেদন করারই সুযোগ নেই।   রোববার (১০ জুলাই) অনলাইনে আবেদন শুরুর প্রাক্কালে সে কথাতেই আরো জোর দিলেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক।

তিনি এও জানালেন, এনআইডি নম্বর না থাকলে তো নয়ই, আইডি’র জন্য আবেদন এর নাম্বার দিয়েও এবার বিসিএসে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এ নিয়ে পিএসসি কোনো জটিলতায় যাবে না।

বাংলানিউজকে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ছাড়া আমরা অ্যালাও করবো না। যাদের এনআইডি নম্বর নাই তাদের ব্যাপারে কিছু করার নাই।
 
যাদের এনআইডি নম্বর নাই তারা ভোটার হওয়ার আবেদন নম্বর দিয়ে পিএসসিতে আবেদন করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমরা কোনো জটিলতার মধ্যে যাবো না।

ড. মোহাম্মদ সাদিক প্রশ্ন তোলেন, এনআইডি নম্বর না হলে আমরা কাউকে শনাক্ত করব কিভাবে, পরিচয় পাবো কিভাবে, তারা যে দেশের নাগরিক সেটা বুঝবো কীভাবে?
 
এর আগে এ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে জানিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন,  কোনো কাজ প্রথম শুরু করলে একটু সমস্যা হবে। তবে তা খুব বেশি নয়। এ নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ আসেনি।
 
তবে পিএসসি’র এমন অনঢ় অবস্থানে স্বপ্ন ভেঙেছে বছর-ভর প্রস্তুতি নিতে থাকা অসংখ্য পরীক্ষার্থীর। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছু এমনই একজন হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার হাসি। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র এখনও হাতে পাননি তিনি। তাই এনআইডি নম্বর ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া যাবে না শুনে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

বাংলানিউজকে আফরোজা আক্তার বলেন, এখন তো ইসিতে যেতে হবে। সেখানে যা বলে করবো। সবই অানসার্টেন। একবার গিয়েছিলাম। বললো এনআইডির হালনাগাদ শুরু হবে ২৫ জুলাই। ১৬ আগস্ট আবেদনের শেষ তারিখ। তারওপর শুনছি, ভোটার হওয়ার আবেদন নাম্বারও কাজে আসবে না। আমার মতো বিসিএস এর প্রস্তুতি নেওয়া অনেকেরই এখন মাথায় হাত।

বিসিএস এর আবেদনে এনআইডি নাম্বার থাকার বিকল্পহীন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় তাই হতাশা ভর করেছে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর মনে। পিএসসি’র এই সিদ্ধান্তকে কেউ বলছে, অদূরদর্শী, কেউবা হঠকারী। বাস্তবতার সঙ্গে এ সিদ্ধান্ত কতোখানি প্রাসঙ্গিক উঠছে সে প্রশ্নও।

অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রামে গিয়ে যথাসময়ে এনআইডি’র নিবন্ধন করতে পারেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক এনআইডি প্রক্রিয়াও বাকি রয়েছে।

সবার হাতে এনআইডি পৌঁছার আগ পর্যন্ত  তাই পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এসএসসি ও এইসএসসি বা স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেটকে বিকল্প হিসেব বিবেচনায় নেওয়ার দাবি উঠেছে।

৩৮তম বিসিএস এর মাধ্যমে ২৪ ক্যাডারে দুই হাজার ২৪টি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে, ১৩টি সাধারণ ক্যাডারে ৫২০টি, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯টি, এবং সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৯৫৫টি পদ অনুমোদন করা হয়েছে।  

১০ আগস্ট পর্যন্ত http//bpsc.teletalk.com.bd অথবা পিএসসির ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd) এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ ও ফি দেওয়া যাবে।    

সর্বশেষ ৩৭তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারিতে আড়াই লাখোধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলো। এনআইডি’র বাধ্যবাধকতায় এবার সে সংখ্যা কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সমর্য়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।