গত ৩০ জুলাই উদ্বোধন করা হয় তৃণ-কর্তন কার্যক্রমের। এ কার্যক্রম চালানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছদরুল ইসলাম সরকারকে আহবায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিছন্নতা কমিটি গঠন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন থেকে আগাছা নিধন ও জঙ্গল সাফ না করার কারণে রাস্তা ছাড়া প্রায় গোটা ক্যাম্পাস আগাছা ও ঘন জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক চারটি ভবন এলাকা, লাইব্রেরি এলাকা, মসজিদ সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্যাফেটেরিয়ার সম্মুখভাগ, ছাত্রদের দুই আবাসিক ভবন এলাকাসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমেটরি ভবন এলাকা যেমন আগাছা-জঙ্গলের দখলে, তেমনি প্রশাসনিক ভবনের চতুর্দিকের যে অংশটায় বিকেল হলেই বিভিন্ন সংগঠনের বৈঠক ও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আড্ডা জমে সেখানেও বাড়ছে আগাছা। শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারের পাদদেশসহ এই এলাকায় একই হাল।
আবাসিক এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আগাছার প্রভাবে রাস্তা সংকুলান হয়ে পড়ায় রাতের বেলা তো পরের কথা, দিনের বেলায়ও বাসায় যেতে ভয় লাগে। প্রায় সময়ই রাস্তায় বিষাক্ত পোকা-মাকড় দেখা যায়। কখন জামা-কাপড় বেয়ে গায়ে উঠে সেই শঙ্কা লেগেই থাকে।
৭৫ একর আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে চারটি স্থাপনার কাজ চলমান থাকায় এমনিতেই শিক্ষার্থীদের বসার জায়গার সংকুলান দেখা দিয়েছে। তার ওপর ঘন জঙ্গলের আধিপত্যে এই সংকট প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠেরও।
জঙ্গলের কারণে সন্ধ্যে গড়াতেই ক্যাম্পাসে বেড়ে যায় শিয়াল-কুকুরের আনাগোনা। কাউকে একা পেলেই তাড়া করে কুকুরের দল। শিয়ালের দল হুক্কা-হুয়া ডাক দিতে থাকলে ব্যাঘাত ঘটে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও ঘুমে।
কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হলের সম্মুখভাগ, মসজিদ সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা ও নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল এলাকার কোথাও কোথাও আগাছার উচ্চতা তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট হওয়ায় এসব এলাকায় বেড়ে গেছে মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপ। ভেতরে বসে পড়লে তাকে আর দেখা যায় না। ফলে বহিরাগতসহ মাদকসেবীরা এখানে নিরাপদে মাদক সেবন করে।
এছাড়া অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনাও ঘটে এসব ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে। গত মাসেই এমন প্রায় ডজনখানেক ঘটনা ধরা পড়ে। গত সপ্তাহেও অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে এক যুগলকে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে মুচলেকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অসামাজিক কর্মকাণ্ড-রোধে সোচ্চার হলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জঙ্গলের কারণেই মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে পোকা-মাকড়ের উৎপাতও।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক ছদরুল ইসলাম সরকার বাংলানিউজকে বলেন, দু’টি যন্ত্র দিয়ে বর্তমানে উপাচার্য স্যারের বাসায় কাজ চলছে। ক্রয় কমিটিকে আরও চারটি হস্তচালিত যন্ত্রের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। যন্ত্র কেনার নির্দিষ্ট নিয়ম মানার কারণে আসতে দেরি হচ্ছে। যন্ত্র চারটি হাতে পেলেই ব্যপক পরিসরে কাজ শুরু করা হবে।
তৃণ-কর্তন যন্ত্রের উদ্বোধনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসের আগাছা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
এইচএ/