ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জবি শিক্ষককে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
জবি শিক্ষককে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর জাহিদুল হককে হত্যার হুমকিদাতা ও তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদী মানববন্ধন, চিত্রাঙ্কণ কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় হুমকিদাতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার ও সন্ত্রাস বিরোধী বিশ্বজিৎ ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানান তারা।

রোববার (২৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে মানববন্ধন করেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষকরা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধনে যোগ দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফ্যাসিস্টদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না’, ‘এক জাহিদ মরে গেলে লক্ষ জাহিদ ঘরে ঘরে’ সহ নানা স্লোগান দেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন কর্মসূচি পালন করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, কীভাবে একজন কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে গুলি করে মারার হুমক্কি দেন? এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা মাঠে থাকব। যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের আমরা ছেড়ে কথা বলব না। ছাত্র আন্দোলঅনে তিনি শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন, এটা কি তার অপরাধ? অভিযুক্ত কাজী মনির ও হুমকিদাতা সালাউদ্দিন মোল্লা স্পষ্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। এখন তিনি বাইরে বসে হত্যার হুমক দিচ্ছেন।

ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী অতুল বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসররা বিদেশে পালিয়ে গিয়েও আমাদের হুমকি দেয়। শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া মানে আমাদের ছাত্র আন্দোলনকে হুমক্কি দেওয়া। জবিতে ফ্যাসিস্ট আমলের যারা রয়ে গেছে, তাদের আমরা খুজে বের করব এবং সব অভিযুক্তদের যেকোনো মূল্যে আইনের আওতায় আনতে চাই। জবি প্রশাসন আমাদের পূর্ণ সহায়তা করবে আশা করি। প্রশাসন আমাদের দাবি না মানলে আমরা সব ক্লাস বর্জন করব।

প্রিন্ট মেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ বলেন, আমাদের স্নেহভাজন জাহিদুল হককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরও। আমরা ব্যথিত বোধ করছি, এজন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। এ হুমকিতে আমরা ভয়ে গুটিয়ে যাইনি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। এভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেবে, এটা কি মগের মুল্লুক? আমাদের শুধু অনুষদের পক্ষ থেকেই নয়, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দাঁড়াতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সমস্ত কিছুতে বিজয়ী হতে পারব।

ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সুমন বলেন, আমাদের যে কলিগের ওপরে হত্যার হুমক্কি এসেছে, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন জাতীয় অংশীজন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে তার চিন্তা সবসময় ছিল। আন্দোলনে জবি শিক্ষার্থীদের পক্ষেও তার শক্ত ভূমিকা ছিল। এখন যখন ওই আন্দোলনের স্পিরিটের বিরোধীরা বহাল তবিয়তে আছে, এই বিষয়ে তার আপত্তি আছে। সে এগুলো নিয়ে বলছে। এজন্য জাহিদ এখন পলিটিকাল টার্গেটে পরিণত হয়েছে। জাহিদের মতো শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে আমরা হারাতে চাই না।

চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান ও ডিন আলপ্তগীন তুষার বলেন, আজ আমরা ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষকরা সম্মিলিত হয়েছি শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হককে হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িত সব দুর্বৃত্তের বহিষ্কারের দাবিতে। উনিও শিক্ষক আমিও শিক্ষক। আজ জাহিদকে হুমকি দিয়েছে, কাল আমাকে দেবে। আমি বলে দিতে চাই বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা, পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা আর শিল্পী সমাজ ছুলে পুরো জয় বাংলা হয়ে যাবেন। জাহিদকে একা ভেবে ভুল করবেন না, আমরা পুরো শিল্পী সমাজ আছি তার সাথে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন এই শিক্ষক। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানায়ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।