ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নিবন্ধন বাঁচাতে পিডিপি’র ‘নতুন কৌশল’

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
নিবন্ধন বাঁচাতে পিডিপি’র ‘নতুন কৌশল’

ঢাকা: কার্যালয় ও কমিটি থাকার বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কালো তালিকায় থাকা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি তার নিবন্ধন বাঁচাতে ‘নতুন কৌশল’ অবলম্বন করেছে। তবে দলটির এ কৌশল শেষ পর্যন্ত তেমন কাজে লাগবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, দলটির নিবন্ধন নেওয়ার পর তেমন কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপে সক্রিয় না থাকায় নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। বারবার অসত্য তথ্য দিয়ে এবং সময়ক্ষেপণ কোনো কাজ না হওয়ায় এবার নতুন কৌশল নিয়েছে দলটি।

এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন দলটিকে নিবন্ধন বাতিল কেন করা হবে না, তার যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ হিসেবে শুনানিতে আসার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু দলটির পক্ষ থেকে শুনানিতে অংশ না নিয়ে বরং বারবার সময় পেছানোর আবেদন করছে। আর এই সময়ের মধ্যে আয়োজিত সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচনে দলটি প্রার্থী দিয়েছে। ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনেও প্রার্থী রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটে অংশ নিয়ে শুনানিতে হয়তো দলটি তাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরতে চায়। কিন্তু ভোটে অংশ নেওয়াটা নিবন্ধন থাকার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কোনো দল নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে নিবন্ধন পেতে হলে কার্যালয়, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কমিটি থাকতে হয়।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুল হালিম জানান, দলটি এখন প্রায় সব নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে। এই কৌশলের দিকে যাচ্ছে তারা। কমিশনও তাদের আবেদন মেনে নিয়েছে। ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটিসহ দু’টো সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন রয়েছে। সেটি শেষ হলেই তাদের শুনানিতে আসার জন্য ফের সময় দেওয়া হবে।

২৪ মার্চের শুনানি এ কারণেই বাতিল করা হয়েছে।

ইসির সহকারী সচিব রওশন আরা বেগম বলেন, প্রথমে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছি। কিন্তু দলটির আবেদনের ভিত্তিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছিল কমিশন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর দলগুলোকে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ কেন্দ্রীয় দফতর ও সব দফতরের তথ্য চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে অনুযায়ী সময়মতো তথ্য দিতে ব্যর্থ হয় পিডিপি। এরপর দফায় দফায় সময় বাড়ানো হলে যে তথ্য দেয় দলটি, তারও কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। তাই দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।

ইসির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দলটির দাখিলকৃত তথ্য অসম্পূর্ণ বিধায় পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় দিয়ে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট চিঠি দেওয়া হয়। ২৯ আগস্ট আরও দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করে পিডিপি। সে আবেদন আমলে নিয়ে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ও বাড়ায় কমিশন।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি এরপর ২৯ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দেয়। কিন্তু জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-কেন্দ্রীয় কমিটিসহ কেন্দ্রীয় দফতর এবং জেলা ও উপজেলা দফতরের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা যাচাই করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার শর্তানুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় দফতর এবং জেলা ও উপজেলা দফতরের কার্যকারিতা ও অস্তিত্ব পায়নি কমিশন।

যে কারণে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৯ অনুযায়ী এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ৯০বি(১)(৩) এর শর্ত প্রতিপালনে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি ব্যর্থ হওয়ায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা বিধি-১০ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

তবে শেষ সুযোগ হিসেবে শুনানিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। সে অনুযায়ী কমিশন দলটিকে চিঠি দিলে গত ৫ জানুয়ারি শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করে পিডিপি। আর সেই আবেদন আমলে নিয়ে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য সময় দেয় কমিশন।

গণপ্রনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- দলটির সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, তিনের এক ভাগ জেলায় এবং ন্যূনতম ১০০টি উপজেলা, থানা বা মেট্রোপলিটনে কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি অফিসে ২০০ ভোটার সদস্য থাকতে হবে।

এসব দাখিল করে কোনো দল নিবন্ধন পেলে কমিটি সময় সময় পরিবর্তিত তথ্য চাইলে তা দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হয়। তা না দিলে কিংবা অসত্য তথ্য দিলেও নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা রাখে নির্বাচন কমিশন। পিডিপি’র ক্ষেত্রে এই ক্ষমতাই প্রয়োগ করছে সংস্থাটি।

শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য দলটির কো-চেয়ারম্যান নিলুফার পান্না কোরেশী এবং মহাসচিব এম এ হোসেনকে গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) চিঠি দেন ইসির উপ-সচিব মো. আব্দুল হালিম খান।

এতে বলা হয়- ‘আপনার প্রেরিত ০৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি নামীয় দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে আগামী ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ভবন, আগাঁরগাও, ঢাকায় শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ’

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি নামীয় দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে শুনানিতে যথা সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এবার তারা শুনানির তারিখ পেছানোর জন্য আবেদন করে কমিশনে। সেই আবেদনও আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন শুনানির তারিখ ২১ দিন পিছিয়ে দেয়। আর ২৪ ফেব্রুয়ারির শুনানিও বাতিল হলো দলটির আবেদনের পর।

এ বিষয়ে জানতে দলটির কো-চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে প্রতিবেদকের পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেন। আর মহাসচিবকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

দলটির প্রতীক ‘বাঘ’। ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে ২৬ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতেও অংশগ্রহণ করে। তবে কোনো নির্বাচনেই তেমন সুবিধা করতে পারেনি।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪১টি রাজনৈতিক দল আছে। পিডিপি বাতিল হলে ৪০টি হবে।

*** ইসির ফাঁদে কোরেশীর ‘বাঘ
*** শুনানিতে নির্ধারণ হচ্ছে পিডিপি’র ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।