বাংলানিউজ: ঈদ কেমন কাটালেন?
অপূর্ব: ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শুটিং করেছি। ঈদের দিন ও পরের দিন পরিবারকে সময় দিয়েছি।
বাংলানিউজ: এবারের ঈদটা কি একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে?
অপূর্ব: অবশ্যই অন্যরকম। দর্শকদের ভালোবাসায় এবারের ঈদ একটু বেশিই স্পেশাল। কারণ দর্শকরা আমার ‘বড় ছেলে’ টেলিছবিটি নিয়ে রীতিমত মাতামাতি করছেন। কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ঢুকলেই ‘বড় ছেলে’র প্রশংসা দেখতে পাচ্ছি। টাইমলাইনে যেন আর কোনো প্রসঙ্গ নেই। অনেকদিন পর কোনো কাজ করে অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। এটা অকল্পনীয়। আমার মনে হয়, ভালো কাজ সবাই দেখে, যেমন ‘বড় ছেলে’।
বাংলানিউজ: অনেকে বলেন দেশীয় নাটক দেখেনা দর্শক।
অপূর্ব: কে বলে দেখেনা! ‘বড় ছেলে’ তাহলে কারা দেখেছে? আমাদের দর্শক আমাদেরই আছে। আমরা অনেক সময় তাদের দুরে সরিয়ে রাখি। আমি আগেও বলেছি, ভালো কাজ মানুষ দলবেঁধে দেখে, ভালো কাজে সাফল্য আসবেই।
বাংলানিউজ: ‘বড় ছেলে’ সবাই পছন্দ করবে, এটা কি বুঝতে পেরেছিলেন?
অপূর্ব: ‘বড় ছেলে’র পুরো কৃতিত্ব নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ানের। এই ঈদে ওর পাঁচটি নাটকে কাজ করেছি। এর মধ্যে ‘বড় ছেলে’ আর ‘ব্যাচ ২৭-দ্য লাস্ট পেজ’-এ বেশি সাড়া পাচ্ছি। আরিয়ানের কাজ বেশ গোছানো। প্রত্যেক শিল্পীই চান নিজের সেরা অভিনয়টুকু উপহার দিতে। এ জন্য চাই উপযুক্ত এনভায়রনমেন্ট। ‘বড় ছেলে’র শুটিংয়ের সময় সেটি ছিলো। মনে আছে শেষ দৃশ্যে মেহজাবিন যখন কেঁদে কেঁদে সংলাপ বলছিলো, আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না, চোখ মুছছিলাম। আমরা না হয় অভিনয়ের খাতিরে নিজে থেকেই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু অন্যরা? অন্যদের চোখও সে সময় ভিজে যাচ্ছিলো। শুটিং ইউনিউটের সবাই ওই দৃশ্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলো। তখনই অবশ্য অনুমান করেছিলাম, ‘বড় ছেলে’ দর্শকের ভালো লাগবে।
বাংলানিউজ: অনেকে বলছেন, আপনি বেশ মার্জিত ও পরিনত অভিনয় করেছেন। সহশিল্পী মেহজাবিনের অভিনয়ের মূল্যায়ণ করুন।
অপূর্ব: আসলে গল্পটি যে ধরনের, সেখানে বাড়াবাড়ি দেখানোর কিছু দরকার ছিলো না। অতিরঞ্জিত কিছু নেই টেলিছবিটিতে। চরিত্রটির কথা মাথায় রেখে আমি কথা বলেছি, হেঁটেছি, বসেছি। আর মেহজাবিনের অভিনয় আমার কাছে দুর্দান্ত লেগেছে। দীর্ঘদিন মানুষ এই নাটকটির কথা মনে রাখবেন।
বাংলানিউজ: ‘ব্যাচ ২৭-দ্য লাস্ট পেজ’ তো ‘ব্যাচ ২৭’-এর সিক্যুয়েল। সিক্যুয়েলে কি সাফল্য এসেছে?
অপূর্ব: গত ঈদে প্রচার হয়েছিলো ‘ব্যাচ ২৭’। আমি মনে করি এবারেরটিও বেশ পরিপূর্ণ ছিলো। দর্শকের ভালো লেগেছে, এর একটি উদাহরণ দেই। একটি স্ক্রিণশট পেয়েছি এমন যে, একটি ছেলে কমার্স নিয়ে পড়ছে, তার জিজ্ঞাসা সে আমার মতো পাইলট হতে পারবে কি-না! টেলিছবিটিতে পাইলট চরিত্রে অভিনয়ের এই হলো সার্থকতা।
বাংলানিউজ: আপনি সাধারণত রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করেন, বেশভুষায় পরিপাটি একটা ব্যাপার থাকে। চ্যালেঞ্জিং বা একটু অন্য ধরনের চরিত্রগুলো করেন না কেন?
অপূর্ব: চ্যালেঞ্জিং চরিত্র অনেক করেছি, তেমন সাড়া পাইনি। দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছি এখন। আমি এক অপূর্ব যদি সব ধরনের চরিত্র করি, তাহলে কিভাবে হবে? সবার কপালে ইমেজ জোটেনা। দর্শকই তার প্রিয় শিল্পীকে আলাদা করে ফেলে। ও অপূর্ব! তাকে এভাবে দেখা যাবে, এরকম। এভাবেই আমার একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে। নির্মাতারা এসে যখন বলেন, ভাই, এই চরিত্রটা আপনি ছাড়া আর কাউকে দিয়ে হবে না, তখন আমি গর্ববোধ করি এই ভেবে যে, যাক, তাহলে আমার বিশেষত্ব তৈরি হয়েছে! একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই, হার্টের ডাক্তার কিন্তু ব্রেন সার্জারি করতে যাবেন না। আমি কেন তাহলে সব চরিত্রে অভিনয় করতে যাবো? আমি কি সব ব্যাপারে স্পোশালিস্ট? নিশ্চয়ই নই!
বাংলানিউজ: শোবিজে অনেক তরুণ নির্মাতার আগমন ঘটেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন। আপনি কাজ করে সন্তুষ্ট হয়েছেন এমন কয়েকজনের নাম বলুন।
অপূর্ব: প্রথমেই বলবো মিজানুর রহমান আরিয়ানের কথা। ও নিজেকে সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই তালিকায় আরো আছে মেহেদি হাসান জনি, মাহমুদুর রহমান হিমি, নিয়াজ কামব্রিন আবীর, গোলাম মুক্তাদিন শান, ইমরাউল রাফান, মাবরুর রশীদ বান্না।
বাংলানিউজ: চলচ্চিত্রের মতো নাটকেও জুটি একটি বড় ব্যাপার। আপনার সঙ্গে ভালো জুটি কার?
অপূর্ব: শুরুতেই বলবো জাকীয়া বারী মমর কথা। ওর সাথে আমার প্রচুর কাজ হয়েছে। তালিকায় আছেন মেহজাবিন, শখ, শার্লিন— তাদের সঙ্গে অনেক কাজ করছি। এখানে সিনিয়রদের কথা কিন্তু বলিনি।
বাংলানিউজ: নাট্যাঙ্গনে এখন অনেক সংগঠন। তাদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?
অপূর্ব: সংগঠনের ইতিবাচক প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন রাত ১১টার মধ্যে শুটিং শেষ করতে হয়। এতে সবারই সুবিধা হচ্ছে। আগে আমাদের অভিযোগ জানানোর মতো জায়গা ছিলো না, এখন অভিভাবক আছেন, তাদের কাছ থেকে সমস্যার সমাধানও পাওয়া োচ্ছে।
বাংলানিউজ: অনেক তারকার স্ট্রাগলের গল্প আমরা জানি। আপনার বেলায় তেমন কিছু ছিলো?
অপূর্ব: একেবারেই না। শুরুতে যখন র্যাম্প মডেল ছিলাম, তখন হাসতে খেলতে কাজ করেছি। নাটকের ক্যামেরার সামনে যখন দাঁড়ালাম, সে সময় আমি কয়েকজন অভিভাবক পেলাম, তারাই আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। আমি গর্বের সঙ্গে তাদের নাম বলতে চাই। নির্মাতা অভিতাভ রেজা, অভিনেতা-নির্মাতা গাজী রাকায়েত আর তারকা শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান— আমার ক্যারিয়ারে এই মানুষগুলোর অবদান অনেক। তাদের একটিই উপদেশ ছিলো আমার প্রতি, তা হলো, ‘কাজই তোমার পরিচয়’। আমি সত্যি সৌভাগ্যবান মানুষ। জীবনের একেকটি ধাপে গিয়ে দেখি কেউ না কেউ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে।
বাংলানিউজ: ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর পর আর কোনো ছবি করলেন না যে!
অপূর্ব: চলার পথে আমি সবসময় ভাবি, আমাকে যার দরকার আমি তার জন্য তৈরি। কেউ যদি মনে করে আমাকে নিয়ে আবার ছবি করবে, সবকিছু মিলে গেলে আমি অবশ্যই কাজ করবো।
* উপভোগ করুন ‘বড় ছেলে’:
আরও পড়ুন>>>
‘বড় ছেলে’ লেখার সময় চোখ ভিজে যাচ্ছিলো: আরিয়ান
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
এসও