ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

আঁই টিপসই করি ন

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৭
আঁই টিপসই করি ন আঁই টিপসই করি ন / সোলায়মান হাজারী ডালিম

ফেনী: সুবিধাবঞ্চিত নিরক্ষর পথশিশু। তাকে দেওয়া হচ্ছে সাতটি পৃষ্ঠা ও একটি কলম। সেইসঙ্গে তার নাম লেখা একটি প্রিন্টআউট। তাকে সাহায্য করবেন একজন সহায়তাকারী।

পাশাপাশি পরবর্তী সাতদিন স্বেচ্ছাসেবী টিম তার টিউটোরিয়াল মনিটিরং করবে। সাত দিন পর সাক্ষরতার পরীক্ষা।

এভাবে একেকটি ওয়ার্ডের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাসহ নিরক্ষর সবাইকে সাক্ষর করে সেই ওয়ার্ডকে নিরক্ষর মুক্ত ঘোষণা।

শিরোনামটি একটি  উদ্যোগ, একটি প্রকল্প। এর অর্থ- আমি আমার নাম সই করতে পারি। উল্লিখিত কার্যক্রমগুলো এ প্রকল্পেরই অংশ।  উদ্যোগটি এগিয়ে নিচ্ছেন ফেনীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। সবাই একজোট হয়ে একটি সংগঠন গড়েছেন, নাম দিয়েছেন পথের পাঠশালা।  

পথের পাঠশাল‍া ও ‘আঁই টিপসই করি ন’ প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ হোসেন দিপু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ফেনী জেলা প্রশাসন, ফেনী পৌরসভাসহ ফেনীর সক্রিয় স্বেচ্চাসেবী সংগঠনগুলো যেভাবে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে, আশা করছি আমরা এ কাজে সফল হতে পারবো। ফেনী জেলাকে নিরক্ষর মুক্ত করতে পারবো।  

আঁই টিপসই করি ন

এটি মূলত একটি সাক্ষরতা আন্দোলন। এ আন্দোলনটি এসেছে ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণের ‘পথের পাঠশালা’ নামে সংগঠনটির হাত ধরে। তারা ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধ শতাধিক পথশিশুকে নিরক্ষর থেকে সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শুধু সাক্ষরতা নয় ওই শিশুরা এখন বাংলা-ইংরেজি বর্ণমালাসহ নামতা পড়ে হিসেবও কষতে জানে।

প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীরা চান, শুধু পথশিশুরা নয়, এ জেলার প্রতিটি মানুষ সাক্ষরতার আওতায় আসুক। টিপসই না দিয়ে নিজের নামটি অন্তত লিখতে শিখুক। তারা একা নন, তাদের এ উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে জেলা শহরটির আরও ১১টি সংগঠন।
 
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফেনী জেলা প্রশাসন ও ফেনী পৌরসভা। এ পথচলায় সারথী হয়ে পাশে রয়েছে দেশের সর্বাধিক পঠিত অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসহ স্থানীয় একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম।  

এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, এ কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে ফেনী জেলা প্রশাসন। আগামী ০৯ মে বিকেল ৩টায় ফেনী জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রমটির উদ্বোধন করবেন। এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তি উদ্যোগগুলো অব্যাহত থাকলে সমাজ পরিবর্তনে বেশি সময় লাগবে না। এমন সময় আসবে, যখন আমাদের দেশে আর কোনো নিরক্ষর মানুষ থাকবে না।  

আঁই টিপসই করি ন

‘আঁই টিপসই করি ন’ প্রকল্প নিয়ে সোহেল রানা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে অন্যরকম— উন্নত দেশ, সোনার বাংলাদেশ। জাতীয় সমৃদ্ধির অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। বর্তমান বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে ফেনী জেলার সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশ।  

তিনি বলেন, ফেনী জেলাকে দেশের প্রথম নিরক্ষরমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের রঙে সবাইকে রাঙাতে আমরা হাতে নিয়েছি ‘আঁই টিপসই করি ন’ প্রকল্প। এ মিশনে প্রথমেই বেছে নেওয়া হয়েছে ফেনী পৌরসভার ০৯ নং ওয়ার্ডকে।

ধীরে ধীরে পুরো পৌরসভা এবং একসময় পুরো ফেনী জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত করার এ সংগ্রামে জেলার প্রতিটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে আহ্বান ‍জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৭   
এসএইচডি/এসএনএস

** পথের পাঠশালার প্রেরণার গল্প


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।