মৌলভীবাজার: সকালে পাখি খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে বনের এক ‘অদেখা ফল’র সাথে দেখা। প্রাকৃতিক বনের সবুজময় গভীরতার মাঝে নানান গাছগাছালিতে ভরা।
ঘাসে ঢাকা বনের পথ বেয়ে ফিরে আসার সময় দেখা হয়ে যায় শংকর সাঁওতালের সাথে। মধ্যবয়সী পরিশ্রমী যুবক। বনের শুকনো কাট থেকে কাঁধে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পাশেই রয়েছে এই বুনোফলটির অবস্থান। সবুজ ঝোঁপের মাঝে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিকে দেখছে!
তাকে এই ফলটির কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানালেন, এই ফলটিকে আমরা ‘বনডুগি’ বলি। এই গাছের ডাটা কেটে রান্না করে সবজির মতো টুকরো টুকরো আমরা খাই। এই গাছগুলো শুধু পাহাড়েই জন্মে।
উদ্ভিদ গবেষক জিনিয়া নাসরিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, এটা এক ধরনের ‘বুনো ওল’। এটা আমাদের প্রাইমারি ফরেস্ট বা রিজার্ভ ফরেস্টে দেখা মেলে। হয়তো যখন বন বেশি ছিল, পুরো বাংলাদেশেই এর দেখা মিলতো। এখন সিলেট ও পাহাড়ি এলাকায় দেখা মেলে। আমাদের দেশে এবং ইন্দো-চায়নিজ দেশে কচুর প্রজাতিগুলো গলা ধরলেও খেতে দেখা যায়। বিষকচু নামের যে কচু এখনও সবখানে দেখা মেলে-সেটাও প্রসেস করে খায়।
শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছোটবেলায় আম্মার কাছে শুনেছি, ‘ও তে ওল খেলে ধরে গলা’। কারণ, এই Araceae family এর সব সদস্যদেরই Calcium oxalate নামক উপাদান থাকে। যা গলার নরম ঝিল্লিতে সুচের মতো ঢুকে যায়। তাকে আমরা গলা ধরা বা গলা চুলকানো বলি।
এতে পুষ্টি বা খনিজ থাকলেও অনেকের জন্য সমস্যা হতে পারে। কচুর ফুল স্প্যাথ নামক সাপের ফণার মতো অংশ দ্বারা ঢাকা থাকে। পুরুষ ফুল ওপরে এবং মেয়েফুল ভেতরে থাকার কারণে অনেক সময়ই পরাগায়নের অভাবে ফল বা বীজ হয় না। তাই তারা ভেজিগেটিভ উপায়ে রাইজোম বা স্টোলন দ্বারা বংশ বৃদ্ধি করে বলে জানান তিনি।
ইংরেজি নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বৃক্ষটির বুনো কচু এবং বুনো ওলে ফল ধরে। সুন্দর লাল বেরির মতো ফল। সবুজ-হলুদ ও শেষে লাল হয়। এই ফল দেখতে লোভনীয় হলেও তা বিষাক্ত। এর ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া হয় অন্যান্য কচু বা ওলের মতো। এর কমন ইংরেজি নাম Devil's Tongue, Voodoo Lily, Corpse Flower বা Snake Palm বলে।
ওল গাছের ফুলের পরাগায়ের বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘ওলের ফুল পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতার ফুল। Titan arum তেমনিভাবে, এটাও আমাদের দেশের বড় ফুল। এর গোলাপী স্প্যাথ - ফণা তোলা সাপের মতো। ওলের ফুলদের 'লাশ ফুল' বলে। এদের ফুলের গন্ধ পচা মাংসের মতো। কেন এমন দুর্গন্ধ এরা ছড়ায়? আমরা জানি, ফুল ফোটে পরাগায়নের জন্য। সব ফুল একইভাবে পরাগায়িত হয় না। এটা যেমন হয়-বিশেষ এক প্রকার গুবড়ে পোকা দ্বারা। তারা এই দুর্গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ফুলের ভেতরে ঢোকে। তারপর ফুলের অংশ তাদের চাপা দেয়। তারা সারারাত ফুলের ভেতরে কাটায়। তাদের চলাফেরায় ফুলের গরাগায়ন হয়। সকালে ফুলের চাপা অংশ খুলে যায় এবং পোকারা বের হয়ে অন্যত্র চলে যায়। ’
‘ওই পরাগায়ন থেকেই এসব ফুলে এমন সুন্দর বেরির মতো গুচ্ছফল ধরে’ বলে জানান উদ্ভিদ গবেষক জিনিয়া নাসরিন সুমন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
বিবিবি/এএটি