ঢাকা, সোমবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

প্রযুক্তির ধারে ঈদকার্ড জাদুঘরে!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
প্রযুক্তির ধারে ঈদকার্ড জাদুঘরে! ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে এ ধরনের কার্ডের এখন আর প্রচলন নেই বললেই চলে

বগুড়া: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে সাবিহা খাতুন। ঈদে তোমার বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাবে না। মাথা নেড়ে জানালো হ্যাঁ। কি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে? জানতে চাইলে সাবিহা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললো কেন, কি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে হয়? বন্ধুদের ঈদকার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে হয় জানো না। এমন কথা শোনার পর আরেকবার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্কুলপড়ুয়া সাবিহা।

তার চাহনিতে মনে হলো সে ঈদ কার্ডের নামটা প্রথম শুনলো। ভাবতে গিয়ে ওকে কিছুটা আনমনা মনে হলো। একটু পরে বললো, আম্মুর মোবাইল ফোন আছে। আম্মুর ফোনটা দিয়ে বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাবো।  

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাবির মোস্তফা ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবা। ওদের কাছে একই রকম প্রশ্ন রাখার পর জবাব মিলবো অভিন্ন। তারাও জানালো, আম্মুর ফোনটা নেবো। বাসায় কোনো নেট সমস্যা নেই। ওয়াইফাই কানেকশন আছে। এরপর চাঁদরাতে ফেসবুকে বা এসএমএস করে ইচ্ছেমতো বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাবো।

একটি সময় ঈদকার্ড ছাড়া ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করাটা যেন চিন্তায় করা যেতো না। ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর হাতে ঈদকার্ড ধরিয়ে দিতো। কেউ কাউকে না পেলে বাসায় পৌঁছে দিতো। ছেলেদের মতো মেয়েরাও ঈদকার্ডে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের কাজটা সারতো।

এককালে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের অন্যতম এই মাধ্যমটি বর্তমানে কালের গর্ভে আবর্তিত প্রায়। কারণ বর্তমান প্রজন্মের কাছে ঈদকার্ডের আবদার বা আবেদন বলে কিছুই নেই। প্রযুক্তির রাজত্বে ঘুরপাক খাচ্ছে তারা।

এই প্রজন্মের ভাবনায় ‘প্রযুক্তির ধারে ঈদ কার্ড এখন জাদুঘরে! -এমনটা বললে মনে হয় খুব একটা বেশি বলা হবে না’। বর্তমান প্রজন্মের কিশোর তরুণ-তরুণীদের কাছে ঈদ কার্ড এখন ‘অতীত ইতিহাস’।  

কাগুজে ঈদকার্ড নিয়ে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, তাদের সময় চাঁদরাত আসার আগ থেকেই বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের ঈদের শুভেচ্ছা ঈদকার্ড কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কে কাকে কত ভাল কার্ড দিতে পারতো তা নিয়ে যেন এক ধরনের প্রতিযোগী হতো। অনেকে নিজ হাতে কার্ড বানাতেন। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে ঐতিহ্যের সেই কাগুজে ঈদ কার্ডের অবস্থা আজ করুণ।    

তার ভাষ্য, বলতে গেলে কাগুজে ঈদকার্ড ছিলো বাঙালি সংস্কৃতির একটা অংশ। কিন্তু সেই ঈদকার্ড আজ প্রযুক্তির কাছে বড় অসহায়। এমন একদিন আসবে সেদিন হয়তো কাগুজে ঈদকার্ড দেখতে আগামী প্রজন্মকে জাদুঘরে যেতে হবে হবে বৈকি।

অথচ এক সময় ঈদ সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় বগুড়ায় কাগুজে ঈদকার্ডের ব্যবসা হতো জমজমাট। ঈদের সময় এলেই শহর থেকে শুরু করে গ্রামপাড়া-মহল্লার অলিগলিতে গড়ে তোলা দোকানগুলো রকমারি ঈদকার্ডে ভরে যেতো। প্রচ্ছদে শোভা পেতো মনকাড়া রঙের ডিজাইন। তরুণ-তরুণীদের ভিড়ে দোকানগুলোয় পা ফেলার জোঁ থাকতো না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এসবই যেন এখন অতীত।

ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রযুক্তির কারণে এখন আর কেউ ঈদকার্ড কেনে না। তাই দোকানে ঈদকার্ড ওঠানো হয় না। এখন সবাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ায় এসএমএস, এমএমএস, ফেসবুক, ইমু, টুইটার, ই-মেইল, টুইটারসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে আপনজনের কাছে সহজেই তথ্য আদান-প্রদান করছেন। বিনিময় করছেন ঈদে শুভেচ্ছা।

বর্তমানে কর্পোরেট শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যম হিসেবে টিকে রয়েছে কাগুজে ঈদ কার্ড। কর্পোরেট অফিস, ব্যাংক, বিমা, রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে এখনো এই কার্ডের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রথা চালু রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষ করে চরম রাজনৈতিক বৈরিতার মধ্যেও দেশের ক্ষমতাবানরা অন্তত এখনো কাগুজে ঈদকার্ড পাঠিয়ে পরস্পর পরস্পরকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।