চা-বাগানগুলোতে অনেক গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের রয়েছে আলাদা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য।
উৎসবের আলপনাতে তুলির আঁচড়ে তারা জানান দিল সংস্কৃতি চর্চার শুদ্ধ প্রহর। নৃত্য কিংবা আলপনা শিল্পের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আত্মমর্যাদার সুযোগ পেতে চায় বারবার।
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো সম্প্রতি উদযাপিত হলো ‘চা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব-২০২০’। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা জনগোষ্ঠীর বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফাগুয়া উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফিনলে টি এর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিইও) তাহসিন আহমদে চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুছ ছালেক প্রমুখ।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাজারো দর্শক উপভোগ করেন চা-জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব। দুপুরের পর থেকেই ফাগুয়া উৎসব উপভোগ করার জন্য ফিনলে চা কোম্পানির ফুলছড়া চা বাগানের মাঠ মিলনমেলায় পরিণত হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা–বাগানবেষ্টিত তিনটি ইউনিয়ন কালীঘাট, রাজঘাট এবং সাতগাঁও। এ তিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরা হলেন কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা, রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী এবং সাতগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন শীল।
ফাগুয়া উদযাপন উৎসবের সদস্য সচিব প্রাণেশ গোয়ালা বাংলানিউজকে বলেন, এতোদিন বাগানে বাগানে চা-শ্রমিকরা নিজেদের মতো করে ফাগুয়া উৎসব করে আসছিলেন। এবারই প্রথম আমরা এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। যাতে বিভিন্ন বাগানের শিল্পীরা তাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য সবার সামনে তুলে ধরতে পারে। সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন চা-বাগান থেকে এসেছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল। এ উৎসবে তারা ঝুমুর নৃত্য, লাঠি নৃত্য, হোলী গীত, করম নৃত্য, মঙ্গলা নৃত্যসহ মনোমুগ্ধকর অনেক নৃত্য পরিবেশন করে।
ফাগুয়া উৎসবের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহ্বায়ক পরিমল সিং বাড়াইক বাংলানিউজকে জানান, আমাদের চায়ের দেশে প্রায় ৪৫টি ছোটবড় ক্ষুদ্র-নৃ জনগোষ্ঠী বসবার করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। উপযুক্ত চর্চা বা মঞ্চের অভাবে আমাদের এমন সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এ ফাগুয়া উৎসব কিছুটা হলেও তাদের মধ্যে নতুন করে অনুপ্রেরণা জাগাবে।
তিনি জানান, প্রায় ১৩টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরে। এগুলো হলো- রাজঘাট চা বাগানের উড়িষ্যার পত্রসওরা ও নৃত্যযোগী-যোগিয়ানী নৃত্য, খেজুরীছড়া চা-বাগানের উড়িষ্যার চড়াইয়া নৃত্য, লাখাইছড়া চা বাগানের ভূমিজের ঝুমুর নৃত্য ও মুণ্ডাদের লাঠি নৃত্য, কালীঘাট চা বাগানের উড়িষ্যার হাড়ি নৃত্য, ফুলছড়া চা বাগানে উড়িষ্যার পালা নৃত্য, মাকড়িছড়া চা বাগানের সাঁওতাল ডং ও নাগরে, সিন্দুরখান চা বাগান উড়িষ্যার ভজনা ও মঙ্গলা নৃত্য, সাতগাঁও চা বাগান ভোজপুরী গুরুভজন-হোলি গীত, সাইটুলা গ্রামের মাহাতো কুর্মীর লাঠি নৃত্য ও ঝুমুর নৃত্য, খান চা বাগান বাড়াইকের ফাগুয়া, করম ও দলীয় ঝুমুর নৃত্য সাদরী, শমসেরনগর চা বাগান তেলেগু লাঠি ও ডাল নৃত্য, আলীনগর চাবাগান পরিবেশন করবে ভোজপুরী/দেশওয়ালী হোলি গীত ও বিরহা। এছাড়াও দেওন্দী চা বাগানের প্রতীক থিয়েটার নাটক মঞ্চায়ন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২০
বিবিবি/আরআইএস/