ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭ রমজান ১৪৪৬

ফিচার

চা বেচে লাখ টাকা আয় পাবনার আল-আমিনের

মুস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
চা বেচে লাখ টাকা আয় পাবনার আল-আমিনের চা বানাচ্ছেন আল-আমিন/ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: মাটির পেয়ালায় ভিন্ন স্বাদের চা বেচে জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছেন পাবনার গাছপাড়ার দোকানি আল-আমিন হোসেন। সেই চা-পান করতে প্রতিদিনই জেলার দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ভিড় করেন তার দোকানে।

আল-আমিনের চায়ের ভিন্নতা ও স্বাদের সুনাম এখন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের মানুষের মুখে মুখে। চা বেচে আল-আমিন এখন মাসে লাখ টাকা আয় করছেন। তার দোকানেও কাজ করছেন ছয়জন কর্মচারী। তাদের মাইনেও দিচ্ছেন প্রায় ১০ হাজারের ওপরে।

পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের পৌরসভার সীমানা তোরণ গেটের পাশেই অবস্থিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী আল-আমিনের চায়ের দোকান। শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে হলেও দোকানটি এখন চা-প্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত স্থান। প্রায় একযুগ আগে দোকানটি তৈরির পর থেকেই সময়ের সাথে সাথে ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। আর এ কারণেই এলাকাটি ‘আল-আমিন চত্বর’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।

বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই আল-আমিনের বানানো চা পান করতে আসে। প্রতিদিন স্বাভাবিক ক্রেতার আগম হলেও ছুটির দিনে সেখানে উপচেপড়া ভিড় হয়ে থাকে। শুরুর প্রথম দিকে প্রায় ২৫ আইটেমের চা বানালেও এখন ১০ থেকে ১৫ ধরনের চা তৈরি হয়। ক্রেতাদের সবচেয়ে পছন্দের চায়ের মধ্যে স্পেশাল মালাই চা, মটকা চা, সর চা, করোনা চা, মসলা চা, তন্দুরি চা, স্পেশাল তন্দুরি চা ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া রং চা, দুধ চা, আদা লবঙ্গ চা, লেবু চা, কমলা চাতো রয়েছেই। প্রতিদিন বিকেল চারটে থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে ওই দোকান। চায়ের পাশাপাশি এখানে দুই ধরনের শরবতের বেশ চাহিদা রয়েছে। ঠান্ডা ও গরম দুই ধরনের শরবত এখানে বিক্রি হয়। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা করে চা যেমন বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ভেষজ উপাদান দিয়ে ৩০ টাকা করে গ্লাসে শরবত বিক্রি করছেন আল-আমিন।

আর্থিক অনটনের কারণে বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি আল-আমিন। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পৈতৃক জায়গায় দোকানটি গড়ে তোলেন তিনি। তার দোকানে প্রতিদিন তিন মণ দুধ, আট কেজি চিনি, দুই কেজি খেজুর, দুই কেজি বাদাম, কিশমিশ দুই কেজি, চা-পাতা এক কেজি লাগে। এছাড়া শরবতের জন্য প্রায় ১০ কেজি অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়।

জেলার বাইরে থেকে আসা একাধিক চা-প্রেমীদের সাথে কথা হয়। তারা জানা যায়, ছুটির দিনে বন্ধু-বান্ধবের সাথে মজা করে চা পান করতে আসেন এখানে। এমনকি এই পথ দিয়ে চলাচল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সফরের যাত্রীরাও এখানে চা ও শরবত পান করেন। অনেকে এখানে চা পান করার সময় সেলফি তোলেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) শেয়ার করেন। ফেসবুকে আল-আমিনের চায়ের বিভিন্ন ভিডিও দেখে এখানে চা পান করতে আসেন চা-প্রেমীরা।

আল-আমিনের চা খেতে আসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা জানালেন, এখানে চা এতটাই মজা যিনি একবার খেয়েছেন তাকে আবারও আসতে হবে। চায়ের ভিন্নতা থাকার পর বেশি দাম রাখেন না আল-আমিন ভাই। আমাদের বাজেটের মধ্যে এক কাপ চা খেতে পারি। এখানে মাটির তৈরি খুঁড়িতে (স্থানীয়ভাবে বলে) চামচ দিয়ে চা খেতে হয়। সপ্তাহে একবার হলেও আমরা আসি চা পান করতে।

‘আল-আমিন চত্বরে’ চা পান করছিলেন কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা। জানালেন, বাসায়তো চা বানিয়ে খাই। আল-আমিন ভাইয়ের বানানো চায়ের মতো এত মজার হয় না। কত কিছু মিশিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে চা তৈরি করেন তিনি। ‘আল-আমিন চত্বরে’ এখন চা-প্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় স্থান। ছোট থেকেই আল-আমিন ভাই আজ অনেক বড় হয়েছেন। কোনোকিছু ধৈর্যসহকারে ধরে রাখলে আর মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই।

দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের, তাদের মধ্যে একজন জানালেন তিনি আগে মাঠ কাজ করতেন। এখন তিনি আল-আমিনের চায়ের দোকানে কাজ করছেন। মাস শেষে ১৮ হাজার টাকা বেতন পান। আমার সঙ্গে আরও ছয়জন কাজ করে এখানে সবার বেতন প্রায় ১০ হাজারের ওপরে।

চা-বিক্রেতা মো. আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রচুর পরিমাণে চা পান করতাম। যেখানেই গিয়েছি সেখানকার সবচেয়ে ভালো চা খাওয়ার চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যার থাকায় তেমন লেখাপড়া করতে পারেনি। ২০১২ সালে ছোট পরিসরে ৮শ টাকা দিয়ে এই চায়ের দোকানের যাত্রা শুরু করি। একটি বিষয় মাথায় নিয়েই আমি চা তৈরি করেছি। সেটি হলো ভিন্নতা থাকতে হবে। তা না হলে মানুষ এখানে চা খেতে আসবে কেন। আল্লাহর রহমতে সেটি আমি করতে পেরেছি। প্রথম দিকে প্রায় ৩০ ধরনের চা বানিয়েছি। এখন ক্রেতাদের চাহিদামতো ১৫ ধরনের চা তৈরি করি। শীতে চা ব্যাপক বিক্রি হয় আর গরমে শরবত। দোকান আর কর্মচারী খরচ বাদ দিয়ে মাসে লাখ টাকার ওপরে আয় হচ্ছে আমার। বিভিন্ন জেলার মানুষ আমার এই চায়ের দোকান এক নামে এখন চিনে গেছে। সবার আগে সততা আর ক্রেতাদেরও চাহিদা অনুসারেও চা করা। অনেক সময় পয়সা না দিয়েও চলে যান অনেকেই।

শখের বসে শুরু করা আল-আমিনের চা এখন তার কর্মের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে প্র্রায় ৬শ কাপ শুধু চা বিক্রি করেন তিনি। অন্যদিকে ২ থেকে ৩শ গ্লাস শরবত বিক্রি করেন তিনি। কাজের সহযোগিতার জন্য ছয়জন কর্মচারী রেখেছেন তিনি। মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকা ইনকাম করছেন ওই চা-বিক্রেতা। শুধু জেলার নয়, জেলা সদরের বাইরে থেকেও আল-আমিনের চায়ের স্বাদ নিতে আসেন চা-প্রেমীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।