ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

২৭ চিকিৎসক-নার্সের একাকিত্ব ঈদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
২৭ চিকিৎসক-নার্সের একাকিত্ব ঈদ

পাথরঘাটা (বরগুনা): মুসলিম সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। পুরো এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়।

কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ একটু ভিন্ন রকম। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি বাসায় না গিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে এবারের ঈদ কাটাবে পরিবারের সঙ্গে।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় স্বজনরা এক সঙ্গে। কিন্তু এবার ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারছেন না বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ২৭ চিকিৎসক ও নার্স।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে করনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে থেকে সাতদিন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর চিকিৎসক ও নার্সদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এ মুহূর্তে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় তিনজন চিকিৎসকসহ ছয়জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সাতদিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ছয়জন চিকিৎসকসহ আরও ১২ জন নার্স।

ঈদের দিন সকালে মোবাইলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বপালনরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাবেয়া আক্তার মালার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবারের ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছি না। বাসায় আমার একটি সন্তান আছে, ওকেও সময় দিতে পারছি না। একজন মা হিসেবে এই খারাপ লাগাটা কখনো বলে বোঝানো যাবে না।

তিনি আরও বলেন, এতসব খারাপ লাগার মধ্যেও ভালো লাগছে এই ভেবে আমি দেশের মানুষের সেবায় একটু হলেও অবদান রাখতে পারছি। আমাদের এই ত্যাগের মাধ্যমে হলেও একের পর এক করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত মানুষ ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি। এবারের ঈদে আমার কাছে এটাই সব থেকে বড় প্রাপ্তি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রধান ডা. কামরুল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুধু চাকরির সুবাদে দায়িত্ব পালন করছি এমনটা নয়। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেও আমরা এখানে নিয়োজিত রয়েছি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দিন আমাদের স্বজন এবং বন্ধুরা যখন তাদের আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করবেন, সেসব ছবি দেখে আমার একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে হলেও মনটা খারাপ হবে। তারপরও এসব মেনে নিয়েই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবো।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বজনদের মধ্যে ফিরেছেন ৩১ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন দুজন। এছাড়া চিকিৎসাধীন ১৬ জনও রয়েছেন সুস্থ হওয়ার পথে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।