ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

ঘুরেছেন ৯৩ দেশ, বিশ্ব দেখতে চান লক্ষ্মীপুরের সোহাগী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
ঘুরেছেন ৯৩ দেশ, বিশ্ব দেখতে চান লক্ষ্মীপুরের সোহাগী একটি পর্যটন কেন্দ্রে নাজমুন নাহার সোহাগী

লক্ষ্মীপুর: দেশ থেকে দেশ ঘুরে বেড়ান। এক প্রকার নেশা বলা যায়। এই নেশায় তার ভালো লাগে অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা। পাহাড়, মরুভূমি, সমুদ্র, গভীর জঙ্গল, বরফে ঢাকা জনপদ, সব সুন্দর-প্রকৃতিই তাকে ডাকে। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক পৃথিবী দেখা হয়ে গেছে। যেখানেই যান, লাল সবুজের পতাকা তার সঙ্গেই থাকে। তার ইচ্ছে পৃথিবীকে চেনা ও জানা। বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকেও।

তার নাম নাজমুন নাহার সোহাগী। বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নে।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের বাগবাড়ি এলাকায় একটি এনজিও’র কার্যালয়ে স্থানীয় সংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় কথা হচ্ছিল ভ্রমণপিপাসু নাজমুন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন বিশ্বভ্রমণ অভিযানের অভিজ্ঞতা, শখ, স্বপ্ন ও ভালোলাগার নানা বিষয়।

২০১৬ ও ২০১৭, দুই বছরে সোহাগী ঘুরেছেন ৩৫টি দেশ। ২০০০ সাল থেকে এ যাত্রায় সবমিলিয়ে তার ভ্রমণের ডায়েরিতে যুক্ত হয়েছে ৯৩টি দেশের নাম। এরমধ্যে বেশির ভাগ দেশই একা ঘুরেছেন। ১৪টি দেশ ঘুরেছেন মাকে সঙ্গে নিয়ে।

অবশ্য এই বিশ্বভ্রমণে নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে তাকে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন তিনবার। তবু বিশ্বজয়ের স্বপ্ন তার। সোহাগীর মতে, ‘ইচ্ছে থাকলে ভয়কে জয় করা সম্ভব’।  

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মেয়েরা এখন পিছিয়ে নেই। তারাও এখন ভয়কে জয় করে। সোহাগী জানান, খুব শিগগির ১০০ দেশ ভ্রমণের ঈর্ষণীয় মাইলফলক ছোঁবেন তিনি। মার্চে ভ্রমণে যাবেন সৌদি আরব, সাউথ অফ্রিকা, ভিয়েতনাম, সেনেগাল ও নাইজেরিয়াসহ সাতটি দেশ। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে নাজমুন নাহার সোহাগীএ পরিব্রাজক বলছিলেন, ‘মানুষের জীবনকাল খুব অল্প সময়ের। বিধাতার আশীর্বাদে পৃথিবীতে আসা। যে পৃথিবীতে জন্মেছি, সেই পৃথিবীটা কেমন, সেই পৃথিবী সম্পর্কে জানতে অদম্য ইচ্ছে জাগে। সেই ইচ্ছে ও আগ্রহ থেকে পৃথিবীর ৯৩টি দেশ ঘুরেছি। স্বপ্ন দেখি, গোটা বিশ্ব দেখার। আগ্রহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভুগোল, ইতিহাস, প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতি, সম্পর্কে জানার এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিও বিশ্ববাসীকে জানানোর। ’

১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরের হামছাদী ইউনিয়নের গঙ্গাপুর গ্রামে সোহাগীর জন্ম। তার ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিন ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে সোহাগী সবার ছোট।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা সোহাগী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য তিনি যান সুইডেনে। সেখানকার লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি লাভ করেন এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি।

স্কুল-কলেজ জীবনে ছড়া-কবিতা লেখা সোহাগী কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন। বাবার কাছে দেশ-বিদেশের ভ্রমণ কাহিনী শুনে ও বই পড়ে বিশ্ব ঘুরে দেখার ইচ্ছে জন্মে তার। এছাড়া শৈশব থেকে গার্লস গাইডের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত তিনি। এসব অভিজ্ঞতাও কাজে লাগিয়েছেন বিশ্বভ্রমণে।

তার ভ্রমণ করা দেশের তালিকায় যেমন একদিকে রয়েছে পূর্বের অস্ট্রেলিয়া, তেমনি রয়েছে সিঙ্গাপুর, ইউরোপের সুইডেন, আইসল্যান্ড থেকে শুরু করে একেবারে পশ্চিমের ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরু, প্যারাগুয়ে, চিলি পর্যন্ত। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মা তাহেরা আমিনকে সঙ্গে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালা থেকে ইউরোপ-আমেরিকার ১৪টি দেশ ভ্রমণ করেন সোহাগী।

ভ্রমণে তার বাংলাদেশের বান্দরবানই সবচেয়ে বেশি হৃদয় কেড়েছে। ভিনদেশের মধ্যে ভালো লেগেছে আইসল্যান্ড। এছাড়া পেরু, চিলিও বেশ ভালো লেগেছে সোহাগী।

বিভিন্ন পর্যটন স্পটে নাজমুন নাহার সোহাগীভ্রমণপিপাসু এই নারী জানান, পুরো পৃথিবীটাই তার বেশ পছন্দের। ৯৩ দেশ ঘুরেও তার মনে হচ্ছে, তেমন কিছুই দেখা হয়নি।

এ ভ্রমণকন্যা বলেন, ‘অনেক দেশই ঘুরে বেড়িয়েছি একা একা। এসময় পথ হারিয়েছি, আবার নতুন পথের সন্ধানও পেয়েছি। চলার পথে নানা জাতির বিভিন্ন মানসিকতার মানুষের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়েছে। সুযোগ হয়েছে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার। ’

সুইডওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় খণ্ডকালীন চাকরি করেছেন সোহাগী। রোজকার খরচ বাদে যা জমান, তা নিয়েই পা বাড়ান নতুন কোনো দেশে। নাজমুন নাহার মনে করেন, একসময় হয়তো তার টাকা হবে। কিন্তু ঘুরে বেড়ানোর শক্তি কিংবা মন থাকবে না। তাই এখন যতটুকু অর্থ সঞ্চয় করছেন, তা দিয়েই ঘুরে বেড়ান।

মাকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখি, তখন মাকে খুব মনে পড়তো। ওই মুহূর্তে ভাবতাম, এমন সৌন্দর্য মাকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে পারলে আরও ভালো লাগতো। সেই অনুভূতি থেকে মাকে নিয়ে ১৪টি দেশ ঘুরে দেখেছি।

সোহাগী বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক সুন্দর দেশ, যা কল্পনা করা অসম্ভব। দেশকে যদি পর্যটকবান্ধব করা যায়, তাহলে বিদেশি ভ্রমণপিপাসুরা আমাদের দেশে ভিড় করবে। দেশ এগিয়ে যাবে। ’ 

বাংলাদেশের পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়ে বই লেখার আশা করছেন সোহাগী। বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তর করবেন সে বই। এতে অন্য দেশের মানুষ বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী হবে বলে আশা করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এসআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।