কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন সাবেক অফিসার বলছেন, আক্রমণ হলে সরাসরি প্রতিরোধেই নামবে না পিয়ংইয়ং। নেবে আরও ভয়ঙ্কর কৌশল।
ওই অফিসার তার নিজের প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, উত্তর কোরিয়া তার বাছা বাছা সৈন্যদের নিয়ে একটি স্কোয়াড গঠন করেছে, যারা দক্ষিণ কোরিয়ায় ঢুকে পশ্চিমা দেশগুলোর পর্যটকদের জিম্মি করে নিয়ে আসতে পারবে।
সেই সামরিক অফিসারের দাবি, হামলা শুরু হলে আগের কোরিয়ান যুদ্ধের মতো (১৯৫০-১৯৫৩) সীমান্তে শরণার্থীদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে যাবে। এই ফাঁক গলে অপহরণ স্কোয়াডের সদস্যরা দক্ষিণে ঢুকে যাবেন কৌশলে। তারপর তারা শুরু করবেন তাদের গুপ্ত কার্যক্রম। জিম্মি করে উত্তরে ঢোকাতে থাকবেন পশ্চিমা পর্যটকদের। তারপর তাদের উত্তর কোরিয়া ব্যবহার করবে উদ্দেশ্য হাসিলের ঢাল হিসেবে।
উং-গিল লি নামে ওই অফিসার ১১ বছর আগে সামরিক বাহিনী ছেড়ে পালিয়েছেন। তার আগে ৬ বছর তিনি স্বদেশের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেন। উং-লি রোববার (১৬ এপ্রিল) যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা বলছিলেন।
উং-গিল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে হত্যার ছক নিয়ে মাঠে নামতে না পারলে তাদের উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালানো উচিত হবে না। কারণ জং-উন যদি আক্রান্ত হন, তবে সবরকমের পাল্টা আক্রমণে যাবেন তিনি।
উং-গিল তার অভিজ্ঞতা থেকে জানান, পিয়ংইয়ং তার সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যকে ‘ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে বিদেশিদের অপহরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এই নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হলে তার বিষক্রিয়ায় টার্গেটকৃত ব্যক্তি অবস্থানস্থলেই ধীরে ধীরে অচেতন হয়ে মারা পড়ে।
এই প্রশিক্ষণেরই সূত্র টেনে তিনি উল্লেখ করেন কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে কিম জং-উনের সৎ ভাই কিম জং-ন্যামের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গটি। তদন্ত মতে, জং-উনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে থাকা ন্যামকে ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করেই হত্যা করা হয়েছে।
উং-গিলের ধারণা, আক্রান্ত হলে উত্তর কোরিয়া এমন নার্ভ এজেন্ট নিয়ে তার গোয়েন্দাদের মাঠে নামাতে পিছপা হবে না।
কোরীয় উপদ্বীপ ঘেঁষে মার্কিন রণতরী ও যুদ্ধজাহাজের চক্কর, সেই চক্কর উড়িয়ে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাচেষ্টা এবং উত্তেজনা প্রশমনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের মধ্যে এই আলোচিত সাক্ষাৎকারটি দিলেন উং-গিল।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্রে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু পেন্টাগনের দাবি, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পিয়ংইয়ং এরইমধ্যে পাঁচটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা এবং দফায় দফায় বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের আশঙ্কা, পিয়ংইয়ং আরেকটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি। সেই শঙ্কা থেকেই মিত্রদের পাশ ঘেঁষে একপ্রকার যুদ্ধ-মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। আর তার জবাবে সমরাস্ত্র প্রদর্শন ও বাকযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এইচএ/