স্পেন সরকার এই গণভোট ঠেকানোর জন্য কাতালোনিয়াজুড়ে অজস্র অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করেছে। তবে আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট জনতাকে বলেছেন, সার্বভৌম জাতি হিসেবে কাতালোনিয়া প্রথম কোনো পদক্ষেপ নেবে রোববার।
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রপ্তানি হয়, তার ২৫.৬ শতাংশ রপ্তানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০.৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে পারছে না। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাপন্থি দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা সাফ জানিয়ে দেন।
এই ধারাবাহিকতায় রোববার অনুষ্ঠেয় গণভোটকে সামনে রেখে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্প্যানিশ জাতির অবিচ্ছেদ্য ঐক্য এবং একক ও অবিভাজ্য মাতৃভূমিতে ফাটল ধরানোর এই গণভোট সংবিধানবিরোধী। এ ধরনের ভোট কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। ’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর পুলিশকে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, গণভোটের জন্য ব্যবহারে নির্ধারিত সরকারি ভবনগুলো যেন ঘিরে রাখা হয়, যাতে ভোট সংশ্লিষ্টরা সেখানে ঢুকতে না পারে। গণভোট আয়োজনের অনেক সরঞ্জামও অবশ্য এরইমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই আয়োজনে জড়িত অনেক নেতাকেও মুখোমুখি করা হয়েছে বিচারের।
তবে মাদ্রিদ সরকার গণভোট ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ নিতে থাকলেও ভোটকেন্দ্র রক্ষায় অসংখ্য ট্রাক্টর নামানো হয়েছে রাস্তায়। এরইমধ্যে গণভোটের কর্মীরা কাতালোনিয়ার স্কুলসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে সেখানে ভোট আয়োজনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ভোটের দু’দিন আগে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বার্সেলোনায় আয়োজিত এক র্যালিতে কাতালান প্রেসিডেন্ট পুইগডেমন্ট জানান, তার সরকার ভোটারদের জন্য ২ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র খোলা রাখার পরিকল্পনা করছে। তিনি জনতার উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘বন্ধুরা, আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। অতএব গণভোটের সমর্থনে পোশাক গায়ে জড়িয়ে রোববার রাস্তায় আসুন। ইতিহাস বদলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বের হোন। ’
পরে সাবেক আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট আর্তার মাসকে নিয়ে ওই র্যালিতে যোগ দেন পুইগডেমন্ট। র্যালির স্টেজে তখন ‘গণভোট গণতন্ত্র’ শিরোনামে বিশাল বিশাল অক্ষরে লেখা কয়েকটি ব্যানার দেখা যায়।
এই গণভোট ঘিরে উত্তপ্ত স্প্যানিশ ক্রীড়াঙ্গনও। কাতালান ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ও তারকা ফুটবলার জেরার্ড পিকে গণভোটকে সমর্থন করলেও এর বিরোধিতায় সরব রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক সার্জিও রামোস। পিকে এবং রামোসের মধ্যে টুইটারে বাক্যবিনিময়ও হয়েছে। কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে সেখানে কি পৃথক ফুটবল লিগ তৈরি হবে, নাকি ফিফার অনুমোদনক্রমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কাতালান ক্লাবগুলো খেলতে পারবে, নাকি স্প্যানিশরাই সুযোগ দেবে লা লিগায় খেলার, এ নিয়েও নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
তবে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ালেও স্বাধীনতাপন্থিদের শুক্রবারের র্যালি ছিল শান্তিপূর্ণ। কাতালান প্রেসিডেন্ট পুইগডেমন্টও সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণভোট সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৭
এইচএ/