বুধবার (১৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি এ অভিযোগ তোলে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরেই আরেক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে হামলা করেছে। শত শত রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ তাদের ‘ব্যাপকতর ও পদ্ধতিগত’ আক্রমণের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে জঘন্য (মানবাধিকার) লঙ্ঘনের জন্য দায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ‘টার্গেট নিষেধাজ্ঞা’ জারির আহ্বান জানানো হয় অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে।
আগস্টের শেষে বাংলাদেশমুখী যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ঢল নেমেছে, সেখান থেকে ১৫০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর প্রমাণভিত্তিক বক্তব্য, উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য, চিত্র ও ভিডিও প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে পুরোপুরি বর্ণনা ও সমন্বিত বিশ্লেষণ উঠে আসে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো রোহিঙ্গাদের ব্রিটিশ শাসনকালে ঢুকে পড়া ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ বলে অভিহিত করে আসছে। যদিও রোহিঙ্গারা ব্রিটিশ শাসনেরও বহু বছর আগে থেকে তৎকালীন আরাকানের আদি-বাসিন্দা বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।
অ্যামনেস্টির মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক লরা হাই বলেন, রাখাইনে তাদের হাতে অপরাধের যে চিত্র এসেছে, তা মিয়ানমারের কাচিন, শান ও পালংসহ অন্যান্য অঞ্চলে জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের সঙ্গে মিলে যায়।
তিনি বলেন, সব জায়গার নিপীড়নই একই রকম। সেনাবাহিনী পুরোপুরি জবাবদিহির উর্ধ্বে, সেজন্য তারা লাগামছাড়া হয়ে যায় এবং এই দায়মুক্তি তাদের আরও অপরাধের জন্য উৎসাহিত করে। কিন্তু এটা এখানেই থামাতে হবে।
সরকারি স্থাপনায় বিচ্ছিন্ন হামলার অজুহাতে গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুটতরাজ—অপরাধের সব মাত্রাযোগ হয় তাদের অভিযানে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, ওই অভিযানের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনী প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে।
সেপ্টেম্বরের শেষে এইচআরডব্লিউ’র এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, সেটা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি ক্ষেত্র হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও বল প্রয়োগে উচ্ছেদের বিপুল প্রমাণ মিলেছে।
এইচআরডব্লিউ তাদের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনে জড়িতদের চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্যও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানায়। এছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর অবিলম্বে অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও নিরাপত্তা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
এইচএ/