দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি হেড (আন্তর্জাতিক বিভাগ) গুয়ো ইয়েঝু বলেছেন, রাখাইনে হামলায় চীন নিন্দা জানাচ্ছে। তবে চীন পরিস্থিতি বোঝে এবং সমর্থন করে।
তিনি উল্লেখ করেন, চীন এবং মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। চীন বিশ্বাস করে মিয়ানমার নিজেই পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।
চারিদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সমালোচনা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ দেশত্যাগী হয়ে আজ বাংলাদেশ। এর পরও কেন চীন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়েঝু জানান, তাদের নীতিতে নেই কোনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।
রোহিঙ্গা নির্যাতন এড়িয়ে তিনি বলেন, অতীত বলে কোনো রাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপরে হস্তক্ষেপের ফল ভালো হয় না। চীন এমন কিছু চায়ও না। কারণ আমরা চাই না দেশটিতে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করুক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দেক। তাদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।
২০১৫ সালে মিয়ানমারের টেস্ট কাউন্সেলর চীন সফর করেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেছেন এই রাজনীতিবিদ। বলেছেন, দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা হবে।
ইতোপূর্বে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে তারা মিয়ানমারের পক্ষ নেয়। সঙ্গে ছিল রাশিয়াও। এমনকি কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও তারা সহায়তা করবে না।
মিয়ানমার-চীন সম্পর্ক প্রতিবেশী হিসেবে নানামাত্রিক। এর একটি বড় অংশ বিনিয়োগ ও ব্যবসাকে ঘিরে। সম্প্রতি জানা গেছে, রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দরের ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিচ্ছে চীন। প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান ওও মং বলেন, প্রায় সাত দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারে এই বন্দর তৈরি হচ্ছে। এর সাথে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও হবে। এছাড়াও রাখাইনে পৃথক বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে।
বন্দর ছাড়াও রাজ্যের ওপর দিয়ে চীন কুনমিং পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার গ্যাস ও পাইপলাইন স্থাপন করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগ মিলিয়ে এর ধারে কাছেও নেই।
বাণিজ্যের তাড়নায় মানবতা বিকিয়ে দেওয়া মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা, গণধর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এর শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লাখ পার করেছে। আগে থেকেই বাংলাদেশে বাস করছে অন্তত চার লাখ।
এদিকে রোহিঙ্গা নিধনের দায় দেশটির সেনাবাহিনীর বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। তিনি বলেছেন, লাখ লাখ মানুষ দেশান্তরী হয়েছেন। মানুষজনকে মারা হয়েছে, এর দায় দেশটির সেনাদের নিতে হবে। এছাড়া অন্তত ৪৩ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, বার্মিজ আর্মি সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে।
ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট। ওই তারিখের দিনগত রাতে রাখাইনে পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
আইএ