নির্বাচনে হেরে যাওয়াই কেবল নয়, নাজিবের জন্য আরও দুঃসংবাদ আসছে। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যত অর্থ কেলেঙ্কারীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার বিচার করবেন সদ্য বিজয়ী মাহাথির মোহাম্মদ।
মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোটের অন্যতম শরীক দল পিকেআর। যে দলের নেতা আনোয়ারকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে পাঠিয়েছে নাজিব।
নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পূর্বে বুধবার দিনগত রাত ২টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে। রাজপ্রাসাদ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কারণ তারা জানতে পেরেছেন আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগের পর তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ দেবেন বলে জানান। একই সঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, পাকাতান আগামী জুনের মধ্যেই আনোয়ার ইব্রাহীমের মুক্তির জন্য কাজ করবে।
মাহাথির আরও বলেন, একবার তিনি মুক্ত হলে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়তে পারবেন। কিন্তু এজন্য তাকে প্রথমে পার্লামেন্ট সদস্য পদে নির্বাচন করে জিততে হবে। আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী হতে হলে প্রথমে তাকে পার্লামেন্ট সদস্য হতে হবে।
ধারাবাহিক অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগে নাজিবের বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, পাকাতান আইনের শাসন প্রত্যর্পণ করতে চায়। আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা যা চাই তা হলো আইনের শাসন ফিরিয়ে দিতে। কেউ যদি আইন ভাঙ্গে, তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বুধবারের (০৯ মে) নির্বাচনে পাকাতান হারাপান পেয়েছে ১২১টি আসন (দি পিপলস জাস্টিস পার্টি-পিকআর পেয়েছে ১০৪টি আসন, ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টি-ডিএপি পেয়েছে ৯টি আসন, সাবাহ হেরিটেজ পার্টি পেয়েছে ৮টি আসন), বারিসান নাশিওনাল পেয়েছে ৭৯টি আসন, মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস) পেয়েছে ১৮ টি আসন ও হোমল্যান্ড সোলিডারিটি পার্টি ১টি আসন পেয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৩ জন।
দেশটির পার্লামেন্টের ২২২টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১১২টি আসন পেলেই কোনো জোট বা দল সরকার গঠন করতে পারে। সে অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করছে ৯২ বছর বয়সী মাহাথিরের জোট পাকাতান হারাপান।
মালয়েশিয়ার উন্নতির রূপকার মাহাথির ক্ষমতাসীন বারিসান নাশিওনাল (বিএন) জোটের হয়েই প্রায় ২২ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে মাহাথির মোহাম্মদ পদত্যাগ করলে বারিসান নাশিওনাল জোটের নেতৃত্বে আসেন নাজিব তুন রাজাক। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নাজিবের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। যার ফলে অর্থনৈতিক ধসের মুখে পড়ে মালয়েশিয়া। মাহাথির তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
নাজিব এ আহ্বান না শোনায় বিরোধী জোট পাকাতান হারাপান থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাহাথির। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে বুধবারের (০৯ মে) সাধারণ নির্বাচনে এক ঐতিহাসিক জয়লাভ করেন তিনি। যার মধ্য দিয়ে আবারও মালয়েশিয়ার হাল ধরছেন উন্নয়নের এ মহানায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৮
ইইউডি/জেআইএম