ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

তিন বছরেও ‘শত্রুতা’ ভোলেনি কাক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯
তিন বছরেও ‘শত্রুতা’ ভোলেনি কাক ঘর থেকে বের হলেই হামলা করে কাক। ছবি: সংগৃহীত

সাপকে আঘাত করলে নাকি তারা মৃত্যুর আগপর্যন্ত তা ভোলে না। সুযোগ পেলেই এর প্রতিশোধ নেয়- মুখে মুখে প্রচলিত এ কথার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও কাকের প্রতিশোধপরায়ণতা নিয়ে এখন আর সন্দেহের অবকাশ নেই! তিন বছর আগে মানুষের হাতে এক সঙ্গীর মৃত্যুর কথা এখনো ভোলেনি একদল কাক। এর জন্য প্রতিদিনই প্রতিশোধ নিচ্ছে তারা। সুযোগ পেলেই চলছে ‘শত্রুর’ ওপর হামলা। কাকের অত্যচারে এখন আর লাঠি ছাড়া বের হতে পারেন না ওই ব্যক্তি।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) চমকপ্রদ এ খবরটি জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

নাম শিবা কেওয়াত, বাড়ি মধ্যপ্রদেশের সুমেলা গ্রামে।

ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার ওপর শুরু হয়ে যায় কাকের আক্রমণ। কখনো দলবেঁধে, কখনো একা একাই ‘শত্রু’র ওপর আক্রমণ করে তারা। ঠোঁট দিয়ে, নখ দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে ফেলে প্রতিপক্ষকে।

তিন বছর ধরে শিবার চেহারা মনে রেখেছে কাকগুলো।  ছবি: সংগৃহীত

একদিন নয়, শিবার জীবনের রোজকার ঘটনা এটি। তার জন্য বিব্রতকর হলেও, এলাকাবাসীর কাছে রীতিমতো বিনোদনের বিষয় হয়ে উঠেছে এ ঘটনা। অনেকেই শিবার বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করেন, কখন তিনি বের হবেন, আর শুরু হবে কাক-মানুষের লড়াই।

তারা বলেন, শিবার ওপর কাক যখন হামলা করে, সেটি ঠিক সিনেমায় যুদ্ধবিমান হামলা করার মতো দেখায়।

ঘটনার শুরু বছর তিনেক আগে। একদিন তারের জালে আটকা পড়া একটি কাকের বাচ্চাকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন শিবা কেওয়াত। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাচ্চাটি তার হাতের মধ্যেই মারা যায়। কিন্তু, তিনি যে উপকার করতে গিয়েছিলেন, বাচ্চাটিকে মারতে নয়- সেটি বোঝেনি কাকগুলো। তারপর থেকেই চলছে অবিরাম হামলা।

কাক তাড়াতে সবসময় লাঠি নিয়ে ঘোরেন শিবা।  ছবি: সংগৃহীত

এখন বেশিরভাগ সময় লাঠি নিয়ে ঘুরতে হয় শিবাকে। তবে কোনো কাককে আঘাত করার ইচ্ছা নেই, শুধু তাড়িয়ে দিতেই লাঠি ব্যবহার করেন তিনি।

কাকের প্রতি শিবা ভালোবাসা দেখালেও বিনিময়ে পাচ্ছেন ঠিক উল্টোটা। হামলায় বেশ কয়েকবার আহত হয়েছেন তিনি। শরীরে রয়েছে বেশ অসংখ্য দাগ।

দীর্ঘদিন ধরে একই ঘটনা চলতে থাকায় তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। খোঁজ নিতে শুরু করেন সাংবাদিকরাও।

ভুক্তভোগী শিবা জানান, শুরুর দিকে কাকের বিষয়টি আমলে নেননি তিনি। কিন্তু, পরে দেখেন গ্রামের আর কাউকেই তারা আক্রমণ করছে না। কাকগুলো এতদিন ধরে তার চেহারা মনে রেখে প্রতিশোধ নিচ্ছে, ভেবে বেশ অবাক হন তিনি।

বরকতুল্লাহ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও পশু-পাখির আচরণ গবেষক অশোক কুমার মুঞ্জালের বিশ্বাস, সিংহভাগ পাখির চেয়ে কাকের বুদ্ধি বেশি। আর এ বুদ্ধিমত্তা তারা প্রতিশোধ নিতেও কাজে লাগাতে পারে।

সিয়াটল ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে, কাকের বুদ্ধিমত্তা প্রখর। হয়রানি করা মানুষদের চেহারা তারা খুব ভালোভাবেই মনে রাখে। এছাড়া, অন্য কাকদের ডেকে ঐক্যবদ্ধভাবে শত্রুর ওপর হামলা করার ক্ষমতাও রয়েছে তাদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।