যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) এমন সংবাদই দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক জাপানি সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। সূত্রে খবরটি ছড়িয়ে যাওয়ার পর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মার্কিন কর্তৃপক্ষও।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, পররাষ্ট্র দফতরের ইরান বিষয়ক শাখার প্রধান ব্রিয়ান হুক ইরানি সুপার ট্যাংকার ‘আদ্রিয়ান দরিয়া ১-‘র ক্যাপ্টেনকে মেইলে প্রস্তাব দেন, ট্যাংকারটিকে এমন কোথাও নিয়ে যেতে, যেখান থেকে সহজেই যুক্তরাষ্ট্র তা জব্দ করতে পারে। বিনিময়ে ক্যাপ্টেনকে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে ট্যাংকারে নিযুক্ত ভারতীয় ক্যাপ্টেন তা প্রত্যাখ্যান করায় মার্কিনিদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমরা বড় পরিসরে বেশ কিছু জাহাজের ক্যাপ্টেন ও জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করি।
গত ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র ইরানি ট্যাংকারটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। মার্কিন কোষাগার দফতর (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট) থেকে বলা হয়, আদ্রিয়ান দরিয়ায় করে ইরানি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর স্বার্থে ২১ লাখ ব্যারেল তেল বহন করা হচ্ছে। এর আগে এ বাহিনীকেও ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ অভিহিত করে কালো তালিকাভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র।
ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, আদ্রিয়ান দরিয়া নামক ওই ট্যাংকারটির ওপর অবরোধ আরোপের আগে ব্রিয়ান হুক ট্যাংকারের ক্যাপ্টেন ভারতীয় নাবিক অখিলেশ কুমারকে অর্থের প্রস্তাব দিয়ে মেইল করেন।
অখিলেশকে মেইলে লেখা হয়, ‘আমি এক শুভসংবাদ জানিয়ে লিখছি। ’ ট্যাংকারটি মার্কিন কর্তৃপক্ষের আয়ত্তের মধ্যে পৌঁছে দিলে কয়েক মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়। মেইলটিকে যেন ভুয়া মনে করা না হয়, সেজন্য এতে পররাষ্ট্র দফতরের ফোন নম্বরও দেওয়া হয় বলে ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়।
কিন্তু পরবর্তীতে অখিলেশ কুমার কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোয় তাকেও কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাবেদ জারিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি একে ‘সরাসরি উৎকোচ’র প্রস্তাব বলে উল্লেখ করেন।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প প্রশাসন তেল বিক্রিতে নিয়োজিত ইরানি শিপিং নেটওয়ার্কের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কেউ ইরানি জাহাজ চলাচল ব্যাবস্থা ধ্বংস করতে সহায়তা করলে তাকে ১৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার প্রদানের ঘোষণাও দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
জুলাই মাসে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞায় থাকা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে তেল পরিবহনের অভিযোগে জিব্রাল্টার অঞ্চল থেকে এ সুপার ট্যাংকারটি আটক করে যুক্তরাজ্য। পরে গত মাসে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে তেল বহন করছে না, তেহরান এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিলে ট্যাংকারটি ছেড়ে দেয় তারা। কিন্তু তারপরপরই সেটি জব্দ করতে নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। যদিও নানা নাটকীয়তার পর ট্যাংকারটি সিরিয়ার উপকূলেই পৌঁছায়।
এর মাঝে ট্যাংকারটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির বিষয়টি টের পেয়ে গত ২৬ আগস্ট ইরান সরকারের মুখপাত্র আলী রাবিই সংবাদমাধ্যমকে জানান, ট্যাংকারটিতে থাকা ১৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ২১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বেচে দেওয়া হয়েছে। তবে কারা সেই তেল কিনেছে, তা জানাননি তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
এইচজে/এইচএ