আসছে ৩১ অক্টোবর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় কী কী ক্ষতি হতে পারে, এর পুরো খতিয়ান রয়েছে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার ওই নথিতে। যদিও সরকার পক্ষ দাবি করছে, ব্রেক্সিট কার্যকরে তারা বর্তমানে যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এর কোনো ইঙ্গিত নেই অপারেশন ইয়েলোহ্যামারে।
এই গোপন নথির বরাত দিয়ে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি বলছে, সরকারের এই ‘চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ভবিষ্যৎ নথি’ অনুযায়ী কোনো চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেনের জনজীবন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবে। এতে বলা আছে, ইংলিশ চ্যানেল পেরোতে গেলে শুল্ক ও অন্যান্য জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। পণ্যবাহী লরিগুলোর আড়াই দিনের বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি জটিলতার সৃষ্টি হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ওষুধের সরবরাহ কমে যাবে। যে কারণে বিশাল মূল্যবৃদ্ধি পাবে। একটা বড় খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। বিদ্যুতের দামও বাড়বে। গোটা দেশে সৃষ্টি হবে বিশাল রাজনৈতিক অস্থিরতা। প্রতিবাদ-পাল্টা প্রতিবাদে অস্থির হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, অধিবেশন স্থগিত হওয়ার আগে হাউস অব কমন্স একটি প্রস্তাব পাস করে সরকারকে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতির গোপন নথিপত্র প্রকাশ করতে বাধ্য করেছে। এই নথি প্রকাশের ফলে সরকারের ব্রেক্সিট প্রস্তুতির অভাব স্পষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য সরকার দাবি করছে, এই নথি তৈরি করার পর ব্রেক্সিট প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আস্থাভাজন চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাইকেল গোভ এই নথি পুরানো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এখন যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি, এর কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই এই অপারেশন ইয়েলোহ্যামারে। এক মাসের বেশি হয়ে গেছে, এটি প্রস্তুত হয়, সেক্ষেত্রে নথিটি অবশ্যই পুরানো। এদিকে, গত ২ আগস্ট এই নথি প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, ব্রেক্সিট ঘিরে অচলাবস্থা কাটাতে ‘প্রোরোগেশন’ (সরকারের যে সিদ্ধান্তে আইনপ্রণেতাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে না এমন ব্যবস্থা) ব্যবস্থার মাধ্যমে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত করেন বরিস জনসন। যে প্রদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ বলে আদেশ জারি করেন স্কটল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারকরা তখন বলেন, বরিস জনসন অসমীচীন উদ্দেশে পার্লামেন্টকে কোণঠাসা ও রানিকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে আমরা মনে করি। খুব শিগগির প্ররোগেশন বাতিল বিষয়ক নির্দেশ জারি করা হবে।
সবমিলে বরিস জনসনের দিন বলতে গেলে খুব খারাপ যাচ্ছে। ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই তিনি একের পর এক পরাজয় দেখছেন। ব্রেক্সিট নিয়ে কারও কাছে ইতিবাচক কিছু পাওয়া যায় কি-না, সে প্রশ্নে দেশ-বিদেশ ঘুরে ব্যর্থ হয়েছেন শুরুতেই। এরপর কমন্সে ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় বিদ্রোহীদের ভোটে হেরে যাওয়া, তাকে হতাশ করে তোলে। ‘কোনো পথ না পেয়ে’ হুমকি দেন ১৫ অক্টোবর আগাম নির্বাচনের। যে প্রস্তাবে কমন্সে পরপর দুইবার হেরে যান বিদ্রোহী-বিরোধী দাপটে। এমনকি বিদ্রোহী-বিরোধীদের চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে আনা বিল কমন্সে পাস হয়ে গেলে ‘কোণঠাসা’ হয়ে যান তিনি। শেষমেষ অচলাবস্থা কাটাতে সিদ্ধান্ত নেন পার্লামেন্ট পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দেওয়ার। যে সিদ্ধান্তের কারণে এবার তাকে ‘বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অপারেশন ইয়েলোহ্যামারের সমালোচনা তো আছেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
টিএ