ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘পায়ের বেড়ি’ খুলছে না সৌদি নারীদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
‘পায়ের বেড়ি’ খুলছে না সৌদি নারীদের পাসপোর্ট হাতে সৌদি নারী। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের নারীরা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন, মাস দুয়েক আগে এমন আইন জারি হলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না তাদের। কারণ, এ আইনে থেকে গেছে বিশাল ফাঁক। অনুমতি ছাড়া নারীরা ভ্রমণে গেলে পুলিশের কাছে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার অভিযোগ করতে পারবেন অভিভাবকেরা। 

সৌদির আইন অনুযায়ী, এমন অভিযোগ পেলে নিখোঁজ নারীকে খুঁজে এনে অভিভাবকের হাতে তুলে দিতে বাধ্য পুলিশ। এমনকি, অভিভাবক চাইলে ওই নারীকে আটকেও রাখতে পারবেন।

 

বুধবার (২৩ অক্টোবর) ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কর্মী ঈমান আলহুসেইনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা এএফপি।  

আগস্টে নারীদের ভ্রমণে বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দেয় কট্টর মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব। দেশটির রাজ পরিবারের এক আদেশে বলা হয়, ২১ বছর বয়সী যে কোনো নারী অভিভাবক অর্থাৎ পিতা, স্বামী বা অন্য পুরুষ আত্মীয়ের সম্মতি ছাড়াই পাসপোর্টের জন্য আবেদন ও বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।  

উদারপন্থি বলে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের উদ্যোগে এই আদেশ জারি করা হলেও ‘তাঘ্যয়ুব’ নামের আইনটি এখনো রয়ে গেছে দেশটিতে। এই আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে গেলে নারীদের অভিভাবকেরা পুলিশের কাছে নিখোঁজের অভিযোগ জানাতে পারবে।  

এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের ভ্রমণে বিধিনিষেধ শিথিল করার নতুন আদেশে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এখনো পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নারীদের স্বাধীন চলাফেরায় বাধা দিতে পারে।  

পশ্চিমা এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী সৌদির পিতারা তাদের সাবালিকা মেয়েদের পাসপোর্ট তৈরিতে নিষেধ করতে পারবেন না। কিন্তু, আগের আইন অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া ভ্রমণে গেলে মেয়ের বিরুদ্ধে নিখোঁজ অভিযোগ করতে পারবেন। আর তাতে পুলিশ তাদের ধরে এনে অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।  

তবে, এ ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মীদের মতে, নারীদের আটক করে রাখার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে সৌদি আরবে। গত বছর শুরা কাউন্সিলের উপদেষ্টারা নারীদের ওপর অভিভাবকের কর্তৃত্ব লাঘবের জন্য ‘তাঘ্যয়ুব মামলা’ নেওয়া থেকে বিরত থাকার প্রস্তাব দিলেও তা এড়িয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।  

এদিকে, রিয়াদের সরকারি পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক ডজন নারী ইতোমধ্যেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে নারীদের ওপর পুরুষ অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে। এতে নারীদের নিয়ন্ত্রণে অভিনব কৌশলের সাহায্য নিতে পারে তারা।

নারীদের বিরুদ্ধে পারিবারিক অবাধ্যতার অভিযোগ আনা হলে তাদের কারাভোগও করতে হতে পারে। ফলে, বৈধ পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও অনেকে বন্দি হতে পারেন দার আল-রিয়ায়। নারীদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ কারাগারটি।  

এছাড়া, ‘অবাধ্য কন্যা’ অভিযোগ এনে নারীদের দার আল-দিয়াফা বা বিশেষ বাড়িতে আটকে রাখতে পারেন তাদের পিতারা।  

আলহুসেইন বলেন, পাসপোর্ট ইস্যু করার স্বাধীনতা থাকলেও নারীরা বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন কি-না, তার নিয়ন্ত্রণ এখনো অভিভাবকদেরই হাতে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এফএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।