মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দেশটির সেনা আদালত এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন এ তথ্য জানিয়েছেন।
খবরে বলা হয়, ২০১৭ সালের আগস্টে উত্তর রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’কালে বুথিডং উপশহরের গুতার পিইন গ্রামে ১৯ আরসা সদস্য নিহত হন। ওই মাসে বিভিন্ন নিরাপত্তা চৌকিতে বেশ কয়েকটি হামলা চালায় আরসা। আরসাকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে মিয়ানমার সরকার। আরসার ওইসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান চালায়। সে সময় সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।
‘গণহত্যার অভিপ্রায়ে’ মিয়ানমার সেনাবাহিনী ওই অভিযান পরিচালনা করে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তাদের।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে চালানো অভিযানকালে বেশ কিছু সৈনিক যথাযথভাবে সেনা আইন অনুসরণ করেনি, মেজর জেনারেল মায়াত কিয়াওয়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত আদালতের অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া যায়। মঙ্গলবার বুথিডংয়ের স্থানীয় একটি ব্যাটালিয়নের সেনা আদালতে এ ব্যাপারে শুনানি হবে। ব্যাটালিয়ন অফিসাররা এ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন।
১৯৫৯ সালের মিয়ানমার সেনা আইন অনুসারে, অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত তিন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এ ধরনের আদালত পরিচালিত হতে হবে।
রাখাইনের গুতার পিইন গ্রামের ওই ঘটনায় বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দুই মাস আগে দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া নেদারল্যান্ডের হেগ’র আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে। এর দু’সপ্তাহ পর সেনা সদস্যদের বিচারের এ ঘোষণা দিলো মিয়ানমার।
এর আগে গত সপ্তাহে মিয়ানমার সরকার জানায়, গাম্বিয়ার মামলায় ডিসেম্বরে হেগে অনুষ্ঠেয় প্রথম শুনানিতে স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সু কি’র নেতৃত্বে একটি দল অংশ নেবে।
এদিকে মিয়ানমার অভিযুক্ত সেনাদের যথাযথ বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেকেই তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না।
এর আগে গত বছরের এপ্রিলে উত্তর রাখাইনের মংড উপশহরের ইন দিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ৭ সেনাকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই বছরেরই নভেম্বরে দেশটির সেনাপ্রধান বিশেষ ক্ষমতাবলে তাদের ক্ষমা করে দেন।
ইয়াঙ্গুনভিত্তিক জাতিগত বিষয়ের পর্যবেক্ষক ইউ মং মং সোয়ি বলেন, যদি দোষ খুঁজে পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে গুতার পিইন ইস্যুতে সেনাদের এমন শাস্তিই দেওয়া উচিত যেন মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সমালোচকরা সন্তুষ্ট বোধ করে। যা হোক, সৎ উদ্দেশ্যে এই বিচার পরিচালনা করা হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করবে বাইরের চাপেই এটি হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি রাখাইনের গুতার পিইন গ্রামে পাঁচটি গণকবরে শত শত লাশের সন্ধান মিলেছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরই ওই গ্রাম সবার আলোচনায় আসে। এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রমাণ মুছে ফেলতে এসিড দিয়ে লাশগুলোকে পোড়ানোর চেষ্টাও করা হয়।
পরবর্তীতে গুতার পিইন ইস্যুতে সেনা আদালত পরিচালনার ঘোষণাকালে মিয়ানমার জানায়, এপির প্রতিবেদনের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ নেই।
মিয়ানমার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এপির ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ফেব্রুয়ারিতে গুতার পিইনে মুসলিম নেতাদের নিয়ে চালানো পরিদর্শনে কোনো গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এইচজে/এইচএ/