ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

করোনা ভাইরাস: শেষকৃত্য ছাড়াই মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
করোনা ভাইরাস: শেষকৃত্য ছাড়াই মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে চীন ছবি: সংগৃহীত

করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে চীনজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের মরদেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। পোড়ানোর পর ছাই নিতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের।

জিংঝোও শ্মশানের পরিচালক শেং বলেন, ‘মৃতদের ছাই এখন আমাদের কাছে কারণ তাদের পরিবারের সদস্যরা কোয়ারেন্টিনে বা দূরে কোথাও এবং এখনই ফিরতে পারছেন না। ’

মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় শুধু নিজের বংশগত নামটি জানালেন তিনি।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘কোনো শেষকৃত্য বা অনুষ্ঠানের অনুমতি নেই। ’

বিশ্বজুড়ে ২০০ দেশ ও অঞ্চলের সাত লাখেরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ। ভাইরাসটির উৎসস্থল চীনের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র পুরো পাল্টে দিয়েছে এ ভাইরাস। প্রচণ্ড সংক্রামক এ ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে মৃতদের বিদায় জানানোর উপায়ও।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনে যারা মারা গেছেন, মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক না কেনো, শোকার্ত পরিবারকে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ার পরও তা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

মৃতদের শান্তিপূর্ণ পরকাল নিশ্চিত করতে রাত জেগে প্রার্থনা, শোকের সাদা পোশাক পরা, সাজানো কফিনের সামনে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আত্মীয়দের ভিড় কিংবা অন্য কোনো ধর্ম অনুযায়ী শবদাহ — এমন কোনো রীতিই পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

কোয়ারেন্টিনে থাকা পরিবারগুলো মৃত ব্যক্তিদের ছাইয়ের প্রতিও সম্মান জানাতে পারছেন না।

হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের বাসিন্দা ওয়াং ওয়েনজুন বলেন, ‘আমরা এমন কী করেছি যে আমাদের এমন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে?’

ওয়েনজুনের চাচা মারা গেছেন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে। তার ছাইয়ের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৫ দিন।

আপাদমস্তক সুরক্ষার পোশাক পরে মরদেহ পোড়ানোর কাজ করতে হয় শেংয়ের কর্মীদের। শেং বলেন, ‘অতীতে তিনদিন পর্যন্ত চলতো প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তারপর আমরা মরদেহ পোড়ানো বা দাহ করার কাজ করতাম। কিন্তু এখন কেউ মারা গেলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে জীবাণুমুক্ত কার্যক্রম চালায় এবং তারপর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। ’

২৯ বছর ধরে এ শেষকৃত্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি। এখন কাজ চলে শিফট করে। দিন-রাতের যে কোনো সময় হাসপাতাল থেকে ফোন আসলেই করোনা ভাইরাস রোগীর মরদেহ সংগ্রহ করতে হয় তাদের। পরদিন সকালে চলে পোড়ানোর কাজ।

হাসপাতালগুলো যেমন ভীষণ কঠোর পরিশ্রম করছে, শেষকৃত্যের কর্মীরাও তেমনই করছে, জানান তিনি।

চীনে এ রোগে মৃতের সংখ্যা একেবারে কমে যাওয়ায় ব্যস্ততা কমেছে শেংদের। কিন্তু কখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে সেটা এখনো তাদের জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।