ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফ্রান্সে ধর্মীয় সম্মেলনই হয়ে উঠলো ‘ভাইরাস টাইম বোমা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
ফ্রান্সে ধর্মীয় সম্মেলনই হয়ে উঠলো ‘ভাইরাস টাইম বোমা’ ফ্রান্সের ওপেন ডোর চার্চের প্রার্থনা। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের একটি চার্চে শুরু হলো সন্ধ্যার প্রার্থনা। চার্চপ্রধান বললেন, ‘আমরা প্রভুর গুণকীর্তন করতে যাচ্ছি! আজ রাতে আপনি কি এ আনন্দ অনুভব করছেন?’

সমবেত কয়েকশ’ খ্রিস্টান একসঙ্গে চিৎকার করে বললেন, ‘হ্যাঁ!’

১৮ ফেব্রুয়ারি এই ওপেন ডোর চার্চের প্রার্থনায় যোগ দিতে হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তবর্তী ফ্রান্সের মিলুজ শহরে আসেন কয়েকশ’ মানুষ। ওই শহরে প্রায় এক লাখ মানুষের বাস।

বিশ্বজুড়ে এ চার্চের যতো অনুসারী আছেন, তাদের কাছে বার্ষিক এ উৎসবটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আসর। কিন্তু এবারের সম্মেলনে কেউ একজন শরীরে বহন করছিলেন করোনা ভাইরাস।

ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে যে দেশগুলোতে করোনা ভাইরাস মহামারি রূপ ধারণ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স। স্থানীয় সরকারের মতে, এ ধর্মীয় সম্মেলন থেকেই দেশটিতে করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে এ সমাবেশের মাধ্যমে।

চার্চের প্রার্থনাকারীরা নিজের অজান্তেই ভাইরাসটি বয়ে নিয়ে গেছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ করসিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা, সুইজারল্যান্ড, ফরাসি পারমাণবিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং ইউরোপের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে।

এর কয়েক সপ্তাহ পর, জার্মানি আংশিকভাবে ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। স্থগিত করে গত ২৫ বছর ধরে চলা অবাধ চলাফেরার চুক্তি। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই জার্মান রয়টার্সকে জানায়, এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ওই চার্চগোষ্ঠী।

চার্চের কর্মকর্তারা জানান, ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়া ১৭ জন করোনা ভাইরাস রোগের (কোভিড-১৯) জটিলতায় মারা গেছেন।

বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসটি ছড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে আরও বেশকিছু ধর্মীয় সম্মেলন। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বড় চার্চ থেকে পাঁচ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

খ্রিস্টান ওপেন ডোর চার্চের ধর্মীয় আসরে উপস্থিত ব্যক্তি ও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বলা এ কাহিনীটিই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্রুততা ও ভয়াবহতার প্রমাণ। জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু এর গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। তাদের সব চেষ্টাই এর সংক্রমণের গতির কাছে হার মানছে।

এক সুন্দর মঙ্গলবার বিকেলে চার্চে কয়েকশ’ বিশ্বাসী সমবেত হয়েছিলেন। পুরনো এক শপিং সেন্টারকে আড়াই হাজার আসনের অডিটোরিয়ামে পরিণত করে প্রার্থনা শুরু করেন তারা। করোনা ভাইরাস তখন বেশ দূরের বস্তু বলেই মনে হচ্ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) তথ্য অনুযায়ী, সে সময় ফ্রান্সে ১২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মুলিজ এলাকার কেউ তখনো এ রোগে আক্রান্ত হয়নি।

সে সময় ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো ফ্রান্সও বড় সমাবেশে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। ওই চার্চে সমবেতদের হাত পরিষ্কার করার জন্য কোনো জীবাণুনাশক ছিল না। করমর্দনেও ছিল না নিষেধ।

চার্চের প্রধান যাজকের ছেলে এবং চার্চটির প্রতিষ্ঠাতার নাতি জোনাথন পিটারস্মিট বলেন, ‘সে সময় কোভিড-১৯ কে আমরা অনেক দূরের কিছু হিসেবেই দেখছিলাম। ’

তার বাবার সামুয়েলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি, কারণ তিনিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।

২৯ ফেব্রুয়ারি চার্চের সমাবেশকেন্দ্রিক প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সাধারণ প্রটোকল অনুযায়ী তিনি কার কার সংস্পর্শে এসেছেন তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের একটি তালিকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দেয় ওই চার্চ। সেটির সাহায্যে ওই সমাবেশের শিশুদের দেখাশোনায় যারা নিয়োজিত ছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শিশুসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের অনেকেই ততক্ষণে এ রোগে অসুস্থ। ফ্রান্সের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থার মাহামারি বিশেষজ্ঞ মাইকেল ভার্নে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম যে, আমাদের সামনেই একটি টাইম বোমা ছিল। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।