ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রোহিঙ্গাদের জন্য পবিত্র কাবায় বিশেষ দোয়া ও নফল তাওয়াফ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
রোহিঙ্গাদের জন্য পবিত্র কাবায় বিশেষ দোয়া ও নফল তাওয়াফ মিয়ানমারের তরুণ হাজি মো. আনাস যাবু। ছবি: মুফতি এনায়েতুল্লাহ

মক্কা নগরী থেকে: হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মক্কায় অবস্থানরত হাজিরা এক এক করে ফিরে যাচ্ছেন নিজ দেশে। এখন যারা মক্কায় আছেন, তাদের সময় কাটছে নফল উমরা, নফল তাওয়াফ, মসজিদে হারামে নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখার মাধ্যমে।

নফল উমরার তাওয়াফেও প্রচুর ভিড়। কখন যে ভিড় একটু কম হবে সেটা অনুমান করে বলা মুশকিল।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে এমন ভিড়ের মাঝে তাওয়াফের ষষ্ঠ চক্করের সময় চোখ আটকে যায় কয়েকজন তরুণকে দেখে। তাদের কারো বয়স চল্লিশ পেরোয়নি। টগবগে যুবক। সবাই ইহরাম পরিহিত। মুখে দীর্ঘক্ষণ কান্নার পানি শুকিয়ে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। তারপরও তারা উচ্চ আওয়াজে দোয়া করে চলেছেন বিরতিহীন। কাছে গিয়ে ভাষা বুঝার চেষ্টা করলাম, না বুঝা গেলো না। তবে ইহরামের ফাঁকগলে বেরিয়ে আসা কাধেঁর ব্যাগে ইংরেজিতে লেখা- মিয়ানমার।

মক্কায় ততক্ষণে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পেরিয়েছে। লু হাওয়ায় শরীর পোড়ার অবস্থা। দ্রুত তাওয়াফ শেষ করলাম তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ততক্ষণে তারা মোনাজাতে মশগুল। তাওয়াফের জায়গায় সাধারণত পুলিশ বেশিক্ষণ কাউকে দাঁড়াতে দেয় না। সে নামাজে দাঁড়াক বা কোরআন তেলাওয়াত- যাই করুক। সেখানে এই যুবকরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে মোনাজাত করছে, পুলিশও কিছু বলছে না, কারণটা কী?

পাশে দাঁড়ানো মাঝ বয়সি এক পুলিশকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করতেই ছলছল চোখে তিনি বললেন, ‘তারা মিয়ানমারের হাজি। জানো না, তুমি সেখানে কী হচ্ছে? তারা মিয়ানমারে শান্তির জন্য, সেখানকার মুসলিমদের জন্য নফল তাওয়াফ করে দোয়া করছে। ’

মসজিদে হারামে সাধারণত ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা হয় না। মনে পড়ল শুক্রবারের কথা। শুক্রবার মসজিদে হারামের খতিব তার খুতবায় আরাকানের মুসলমানদের জন্য বিশেষ দোয়া করেছেন, পুরো হারাম শরীফ তখন আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল।

মিয়ানমারের এক ট্রাভেল এজেন্সির  ব্যানার।  ছবি: বাংলানিউজমন ছুঁয়ে গেলো যুবকদের দেখে, তাদের প্রচেষ্টার কথা শুনে। দোয়া শেষে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে কথা বলতে চাইলাম। তাদের প্রায় সবাই এড়িয়ে গেলেও নিরাশ করেননি একজন। নাম মো. আনাস যাবু।

মিয়ানমারের কাচিনের বাসিন্দা মো. আনাস। এটি মিয়ানমারের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি রাজ্য। কাচিনে মুসলমান বসবাসের হার একেবারেই কম। ছোটখাটো ব্যবসা করেন আনাস। তিনিসহ এই যুবকদের কেউ কখনো রাখাইন প্রদেশে যাননি। তবে সেখানকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের খবর রাখেন। বর্তমান পরিস্থিতি খুব উত্তপ্ত। তাই তারা প্রতিদিন নিয়ম করে নফল উমরা পালন করে সেখানকার শান্তির জন্য দোয়া করছেন।

মো. আনাস জানালেন, শুধু রাখাইনে নয়, মিয়ানমারজুড়েই মুসলমানরা নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার। অবস্থা এমন, বাঁচতে চাও তো মুখ বন্ধ রাখো। মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরি প্রাপ্তি, ব্যবসার লাইসেন্স, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার। কথায় কথায় হুকুম আর বিধি-নিষেধের খড়গ নেমে আসে।

সুচিকে খেলনার পুতুল সাব্যস্ত করে কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ ফুটিয়ে আনাস বলতে থাকেন, সুচির কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা জেনারেলদের। সুচিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে বিশ্বকে দেখাতে। সে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। জেনারেলদের বেশিরভাগ মুসলিম বিদ্বেষী। মুসলমানরা সুকিকে বিশ্বাস করে ঠকেছে।

আনাসের দাবি, মিয়ানমারে মুসলিম জনসংখ্যার হার শতকরা ১০ ভাগ। কিন্তু বিভিন্নভাবে তাদের কম দেখায়, মাত্র ৪ ভাগ।

এবার মিয়ানমার থেকে সাড়ে চার হাজারের মতো হজযাত্রী হজপালনে মক্কা এসেছেন। হজপালনে তাদের জনপ্রতি খরচ প্রায় পাঁচ হাজার ডলারের মতো।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের কষ্ট, নির্যাতনের কথা নাফ নদি পেরিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, হাজার হাজার মাইল দূরে ইসলামের পবিত্র ভূমিতেও উচ্চারিত হচ্ছে, তাদের জন্য বিশেষ দোয়া হচ্ছে- চোখের পানিতে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো হচ্ছে। এমন সংহতি ও আকুতি হয়তো বৃথা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এমএইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।