নফল উমরার তাওয়াফেও প্রচুর ভিড়। কখন যে ভিড় একটু কম হবে সেটা অনুমান করে বলা মুশকিল।
মক্কায় ততক্ষণে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পেরিয়েছে। লু হাওয়ায় শরীর পোড়ার অবস্থা। দ্রুত তাওয়াফ শেষ করলাম তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ততক্ষণে তারা মোনাজাতে মশগুল। তাওয়াফের জায়গায় সাধারণত পুলিশ বেশিক্ষণ কাউকে দাঁড়াতে দেয় না। সে নামাজে দাঁড়াক বা কোরআন তেলাওয়াত- যাই করুক। সেখানে এই যুবকরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে মোনাজাত করছে, পুলিশও কিছু বলছে না, কারণটা কী?
পাশে দাঁড়ানো মাঝ বয়সি এক পুলিশকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করতেই ছলছল চোখে তিনি বললেন, ‘তারা মিয়ানমারের হাজি। জানো না, তুমি সেখানে কী হচ্ছে? তারা মিয়ানমারে শান্তির জন্য, সেখানকার মুসলিমদের জন্য নফল তাওয়াফ করে দোয়া করছে। ’
মসজিদে হারামে সাধারণত ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা হয় না। মনে পড়ল শুক্রবারের কথা। শুক্রবার মসজিদে হারামের খতিব তার খুতবায় আরাকানের মুসলমানদের জন্য বিশেষ দোয়া করেছেন, পুরো হারাম শরীফ তখন আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল।
মন ছুঁয়ে গেলো যুবকদের দেখে, তাদের প্রচেষ্টার কথা শুনে। দোয়া শেষে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে কথা বলতে চাইলাম। তাদের প্রায় সবাই এড়িয়ে গেলেও নিরাশ করেননি একজন। নাম মো. আনাস যাবু।
মিয়ানমারের কাচিনের বাসিন্দা মো. আনাস। এটি মিয়ানমারের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি রাজ্য। কাচিনে মুসলমান বসবাসের হার একেবারেই কম। ছোটখাটো ব্যবসা করেন আনাস। তিনিসহ এই যুবকদের কেউ কখনো রাখাইন প্রদেশে যাননি। তবে সেখানকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের খবর রাখেন। বর্তমান পরিস্থিতি খুব উত্তপ্ত। তাই তারা প্রতিদিন নিয়ম করে নফল উমরা পালন করে সেখানকার শান্তির জন্য দোয়া করছেন।
মো. আনাস জানালেন, শুধু রাখাইনে নয়, মিয়ানমারজুড়েই মুসলমানরা নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার। অবস্থা এমন, বাঁচতে চাও তো মুখ বন্ধ রাখো। মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরি প্রাপ্তি, ব্যবসার লাইসেন্স, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার। কথায় কথায় হুকুম আর বিধি-নিষেধের খড়গ নেমে আসে।
সুচিকে খেলনার পুতুল সাব্যস্ত করে কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ ফুটিয়ে আনাস বলতে থাকেন, সুচির কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা জেনারেলদের। সুচিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে বিশ্বকে দেখাতে। সে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। জেনারেলদের বেশিরভাগ মুসলিম বিদ্বেষী। মুসলমানরা সুকিকে বিশ্বাস করে ঠকেছে।
আনাসের দাবি, মিয়ানমারে মুসলিম জনসংখ্যার হার শতকরা ১০ ভাগ। কিন্তু বিভিন্নভাবে তাদের কম দেখায়, মাত্র ৪ ভাগ।
এবার মিয়ানমার থেকে সাড়ে চার হাজারের মতো হজযাত্রী হজপালনে মক্কা এসেছেন। হজপালনে তাদের জনপ্রতি খরচ প্রায় পাঁচ হাজার ডলারের মতো।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের কষ্ট, নির্যাতনের কথা নাফ নদি পেরিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, হাজার হাজার মাইল দূরে ইসলামের পবিত্র ভূমিতেও উচ্চারিত হচ্ছে, তাদের জন্য বিশেষ দোয়া হচ্ছে- চোখের পানিতে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো হচ্ছে। এমন সংহতি ও আকুতি হয়তো বৃথা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এমএইউ/জেডএম