এসব মাহফিলের মাধ্যমে সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। মাহফিলের মাধ্যমে অন্ধকারাচ্ছন্ন আত্মাগুলো আলোর দিশা পায়।
তবে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার আদেশ উপদেশ প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু করণীয় পদ্ধতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি (হে নবী) আপনার প্রভূর পথে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান করুন, আপনি এমন এক পদ্ধতিতে যুক্তি তর্ক করুন যা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা। ’ -সূরা নাহল: ১২৫
সমাজের অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলগুলো আয়োজনের উদ্দেশ্যে হলো- হেদায়াতের নসিহত বাণীসমূহ শুনানো। গোনাহ মাফের পথ দেখিয়ে দেওয়া। জান্নাতের পথ দেখানো। মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসা। মন্দ কাজের প্রতি নিরুৎসাহী করা।
কিন্তু কিছু কিছু ওয়ায়েজকে (বক্তা) দেখা যায়, মাহফিলে অপ্রাসঙ্গিক গল্প-গুজব কাল্পনিক কাহিনী বলতে এবং শুনাতে বেশি পছন্দ করেন। কোনো কোনো ওয়ায়েজ অপর গোষ্ঠী কিংবা ভিন্ন মতালম্বীদের গালমন্দও করেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
অনেক বক্তা কাহিনী বর্ণনা করতে যেয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে ফেলেন। ফলে এলাকার মধ্যে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো স্থানে মারামারি ও সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত সতর্কতা জারি করতে হয়। এসব ঘটনা ওয়াজের তাৎপর্যকে নষ্ট করে দেয়।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা যদি চাইতেন তাহলে এরা কেউ তার সঙ্গে শিরক করতো না; আর আমি তোমাকে তাদের ওপর পাহারাদার নিযুক্ত করে পাঠাইনি, তুমি তো তাদের ওপর কোনো অবিভাবকও নও। তারা (মুসলমান ব্যতীত) আল্লাহতায়ালার পরিবর্তে যাদের ডাকে তাদের তোমরা গালি-গালাজ দিও না, নইলে শক্রতার বশবর্তী হয়ে না জেনে আল্লাহতায়ালাকেও তারা গালি দেবে, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছেই তাদের নিজেদের কার্যকলাপ সুশোভন করে রেখেছি। ’ -সূরা আন আম: ১০৭-১০৮
এখনতো এমনও দেখা যায়, মাহফিলের বক্তা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আয়োজকরা বক্তার জ্ঞান গরিমা তাকওয়া বিবেচনা না করে শুধু সুমধুর কন্ঠ স্বরকে বিবেচনা করেন। যার ফলে মাহফিল শেষে শ্রোতারা বক্তার আলোচ্য বিষয়বস্তুর গুরুত্বের চেয়ে কন্ঠ স্বরের প্রসংশা করতে থাকেন।
অথচ কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন লোকের কথামতো চলবেন না, যার অন্তকরণকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি। ’ -সূরা কাহাফ: ২৮
বর্তমান সময়ে ওয়াজ মাহফিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো- বক্তার হাদিয়া প্রসঙ্গ। যে বক্তার হাদিয়া যতো বেশি, ওই বক্তার ওয়াজ শোনার প্রতি শ্রোতারা ততো বেশি আগ্রহী। সাধারণ মহলে একটি ধারণা হলো- যেহেতু বক্তার হাদিয়া বেশি, তাই তিনি খুব বড় আলেম।
কিন্তু দেখুন কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তার অনুসরণ করো, যে তোমাদের কাছে কোনো প্রকার প্রতিদান চায় না। ’ -সূরা ইয়াসিন: ২১
ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা একটি দ্বীনি দাওয়াতি কাজ। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করলে উহাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোনো মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে। ’ -সূরা নিসা: ৮৫
শীতকালে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসব ওয়াজ মাহফিল হলো- জান্নাতের বাগান সদৃশ। যেখানে প্রবেশ করলে মনের মধ্যে প্রশান্তি আসে। আল্লাহতায়ালার ক্ষমা পাওয়া যায়।
তাই বক্তাদের আলোচনার মাধ্যমে জান্নাতের বাগান থেকে যেনো ফেতনার সৃষ্টি না হয়- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও বেহেশতের দিকে ধাবিত হও। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৩৩
সুতরাং প্রত্যেকটি মাহফিলের আয়োজন লৌকিকতামুক্ত হোক, সফল হোক- এই প্রত্যাশা করি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
এমএইউ/