ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে ভ্রাতৃবিরোধ নিষিদ্ধ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
ইসলামে ভ্রাতৃবিরোধ নিষিদ্ধ

সৎচিন্তার সবই ঈমান। হাদিসের ভাষায় ‘সে-ই ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে যে আল্লাহকে ‘রব’ (প্রতিপালক), ইসলামকে ‘দ্বিন’ (ধর্ম) ও মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

’ (মুসলিম)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমার সৎকাজ তোমাকে আনন্দ দেবে এবং তোমার অসৎ কাজ তোমাকে পীড়া দেবে তখন তুমি মুমিন...। ’ (মুসনাদ আহমদ)

বিভেদ, বিচ্ছিন্নতা মুসলমানদের আত্মশক্তি নষ্ট করে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর কলহ কোরো না...। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)

অবিশ্বাস অনৈক্য, সংঘাতের পথে ধরে ধ্বংস হওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ ‘আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো এবং বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণে রাখো; যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে।
অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে প্রীতি স্থাপন করে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা হয়ে গেলে ভাই ভাই...। ’ (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১০৩)

ইসলামের বিঘোষিত নীতিতে আত্মঘাতী ভ্রাতৃবিরোধ নিষিদ্ধ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ধর্ম সহজ...কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।
’ (বুখারি)

মুসলমানদের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ব্যবহৃত কূটকৌশল :

ভ্রাতৃত্ববোধ দুর্বল করা

মীমাংসিত বিষয়ে মতবিরোধ

পারস্পরিক কুধারণা

ভুল, মিথ্যা সংবাদ, গিবত ও অপবাদ।

মুসলমানদের মধ্যে বিদ্বেষ এবং ঝগড়া সৃষ্টিতে শয়তানের আবিষ্কৃত কিছু কিছু পদ্ধতি এমন, যা কেউ খারাপ চোখে দেখেন না। এভাবেই মুসলমানদের সময়, শক্তি, যোগ্যতা ও ধন-সম্পদ নিজেদের মধ্যে ফাটাফাটিতে নিঃশেষ হয়। এতে ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুরা আনন্দ পায়।

অন্যদিকে ভ্রাতৃত্ব রক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই।
সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। ...যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। ’ (বুখারি)

প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালিম হোক অথবা মাজলুম। (অর্থাৎ জালিম ভাইকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মাজলুম ভাইকে জালিমের হাত হতে রক্ষা করবে। ’ (বুখারি)

অন্য এক হাদিসে আছে, ‘...দুজন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। বলা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বলেন, (নিশ্চয়ই) সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল। ’ (বুখারি)

মুসলমানের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম পারস্পরিক আমানত। ইসলামী জীবনাদর্শের বাস্তব প্রতিফলন; এক মুসলমানের কাছে অন্য মুসলমান নিরাপদ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি (পাপ) আর তাকে হত্যা করা কুফরি। ’ (বুখারি)

প্রিয় নবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান পরস্পরের জন্য পবিত্র...উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন এসব কথা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেয়। ’ (বুখারি)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম সর্বতোভাবে পবিত্র। (মুসলিম)

আখেরি জামানায় ঈমানের হিফাজত এক মহাপরীক্ষা। উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব উম্মাহর ঐক্য অক্ষুণ্ন রাখা। তাঁদের অদূরদর্শিতা অথবা ঈমান ইলমের ওপর হামলা প্রতিহত না করার কারণে ইসলামী মূল্যবোধ দুনিয়া থেকে উঠে যেতে যেতে, একসময় সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে নেওয়া হবে।

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ বান্দাদের থেকে হঠাৎ করে ইলম উঠিয়ে নেবেন না; বরং ইলম উঠিয়ে নেবেন উলামাদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে। এক পর্যায়ে যখন একজন সত্যপন্থী আলেমও থাকবে না, তখন লোকেরা মূর্খদের তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। এই মূর্খরা ধর্মীয় বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে অজ্ঞতা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত দেবে। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে। ’ (বুখারি)

বস্তুত ঈমানী দুর্বলতার কারণে কুফরি, মুনাফিকি ও ফাসিকির পথে মানুষ ক্রমে ক্রমে আমলহীন, বেঈমানে পরিণত হয়। অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা পরিহার করে ঈমানী মেহনত হোক আমাদের সংকল্প ও ইবাদতের প্রেরণা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। ’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।