আটকুঁড়া সেরালির ঘরে সন্তান আসছে- এ খবরটা আর গোপন রইলো না।
হঠাৎ নবজাতকের চিৎকার আর কান্নাকাটিতে পাড়ার লোকের কান খাঁড়া হয়ে গেলো।
দাইমা দরজা ফাঁক করে হাত ইশারা করে বাইরে থেকে দু’জন নারীকে ডেকে ঘরে নিয়ে গেলেন। পাড়ার নারী-শিশুরা এসে সেরালির বাড়িতে এসে ভিড় করেছে। সেরালির সন্তান দেখার জন্য মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সবাই সেরালিকে বাহবা দিতে লাগলো। তার আনন্দ আর ধরে না। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে শত সহস্র কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দু’হাতে মুখ মুছে নিলো। সে সবাইকে চৌকি, পিঁড়ি আর মাদুর পেতে বসতে দিলো।
সবাই সেরালির উঠোনে বসে তার প্রশংসা করতে লাগলো। সেরালি আনন্দে ঘরের ভেতর থেকে বাম হাতের মুঠ ভরে চিনি এনে ডানহাতের দু’আঙুলের চিমটিতে হাতে হাতে বিতরণ করলো। সামান্য ক’টা চিনিদানা মুখে গেলেও গলা ভেদ করে কারও পেট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
একমুঠ চিনি বিশ/পঁচিশ জনের মধ্যে বিতরণ করার পর হাতে যা অবশিষ্ট ছিলো সেরালি তা ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটা মোটা কাগজে পেঁচিয়ে পাতিলের ভেতরে যত্ন করে রেখে দিলো।
এদিকে সবাই চিনি খাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে যখন একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে তখন সেরালি হাত মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে প্রশান্ত মুখে সবাইকে লক্ষ্য করে বললো, মিষ্টিমুখ তো করালাম, এবার মিষ্টিমুখে আমার সন্তানের জন্যে মিষ্টি করে একটা দোয়া করে যাও। খাওয়া আজই শেষ না, আল্লাহ্ বাঁচিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে আরও খেতে পারবে।
এমন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। প্রসূতিঘরের দরজা ভেঙে এক নারী লাফিয়ে এসে উঠোনে পড়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালিয়ে গেলো। কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে উঠোনের লোকগুলো বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। আরেকজন মুখ ঢেকে প্রসূতিঘর থেকে বেরিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়।
ঘটনা কি! ঘটনা জানার জন্য কেউ কেউ উঁকি-ঝুঁকি করছে। প্রসূতিঘরে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। কট কট, চিকিচিকি, গুনগুন-ক্যাঁচক্যাঁচ, ফিচিক-কিচিক-চিরিৎ-চিরিৎ, শোঁ শোঁ, ঝন্ ঝন্!
ঘরের দরজা ফাঁক করে দাইমা ইশারা করতেই সেরালি দৌড়ে দরজার কাছে গেল। দাইমা বললো, ভাই, আমাকে বাঁচাও। আমি আর এই ঘরে থাকতে পারছি না। সেরালি বিস্ময়ে বললো কেন, কী হয়েছে দাইমা?
দাইমা সেরালিকে বললো, সর্বনাশ! তোমার সন্তান তো একটা আর দুইটা না। খালি হইতেই আছে। ঘর ভরে গেছে সন্তানে! এগুলা তোমার ছেলে-মেয়ে, না ভূত-পেতনি আল্লায় জানে বলে দাইমা কাঁপতে লাগলো।
এদিকে সেরালি দরজা ফাঁক করে গলা বাড়িয়ে ফুচকি দিতেই ইঁদুরের মতো কি একটা ছুটে এসে বললো, বাবা সেরালি, এদিকে আসো, তোমাকে একটা চুম্মা দিই, চুম্মা!
সেরালি চোখ দু’টো গোল করে দাইমাকে ডেকে বললো, ব্যাপার কি দাইমা! ঘরে এমন কটর কটর কথা কয় কেডা? দাইমা জবাব দিলো, কেডা আবার, তোমার সন্তানেরা কথা কয়। সেরালি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, কী কন এসব? এক মিনিটের পোলা-মাইয়া আবার কথা কয় কেমনে?
চলবে….
***সেরালির স্ত্রীর উপর ভূতের আছর | বিএম বরকতউল্লাহ্
***ভূত-দেবতার চালাকি | বিএম বরকতউল্লাহ্
***ভূতপাহাড়ের ভূত-দেবতা | বিএম বরকতউল্লাহ্
***সেরালি | বিএম বরকতউল্লাহ্
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
এএ