বিশেষ করে, চলে যাওয়া লোকসভা ভোটে রাজ্যের যে সীমান্তবর্তী কেন্দ্রগুলোতে বিজেপি যথেষ্ঠ সাফল্য পেয়েছে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলে। ওই হিন্দু ভোটব্যাংক আসামের ঘটনার পর সম্ভবত দূরে সরেছে বিজেপি থেকে।
ওইসব এলাকায় ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মমতার এনআরসি প্রচারে। হয়ত ‘ওই ভোট ব্যাংক বুঝতে পেরেছে, মুখে বিজেপি শিবির যতই হিন্দুত্ব নিয়ে যা কিছু বলুক না কেনো, অনুপ্রবেশকারীর কোনো জাত হয় না। আর সে কারণেই আসামে এনআরসি থেকে নাম বাদ যাওয়া তালিকায় হিন্দুর সংখ্যাই বেশি। ’
এমন মত বিজেপি বিরোধীদের। আর এই বিষয়টাকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন মমতা ও তার দল। তার জেরেই প্রচারে মমতা কয়েক যোজন এগিয়ে গেছেন বিজেপির থেকে।
মমতার প্রচারে জোর বাড়তেই পশ্চিমবাংলায় এনআরসি শেষমেশ ব্যুমেরাং হয়ে বিজেপি শিবিরের দিকেই ধেয়ে আসছে না তো? রাজ্য বিজেপির অন্দরে এখন এই আশঙ্কাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আগামী ১ অক্টোবর কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। রাজ্য বিজেপি চাইছে, অমিত শাহ এমন কিছু কলকাতায় এসে বলুন, যাতে এনআরসি নিয়ে বিজেপির অস্বস্তি কিছুটা হলেও কমে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপি দলের উদ্বাস্তু সেলকে প্রচারের ময়দানে নামানোর কৌশল নিয়েছে। কিন্তু যে উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালি ভোট ব্যাংককে হাতিয়ার করে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে শক্তি আরও বাড়াতে চাইছে, এনআরসির আতঙ্কে সেই ভোট ব্যাংকেই ফাটল ধরার ইঙ্গিত পাচ্ছে বিজেপি।
কেননা, এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এনআরসি আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। আর এ কারণেই রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় উদ্বাস্তু হিন্দুদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তীব্র ভয়ভীতি বিজেপির নজর এড়িয়ে যায়নি।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ইদানিং কথাতে তার ইঙ্গিতও স্পষ্ট মিলছে। তিনি বলেছেন, ‘এনআরসি নিয়ে ইচ্ছে করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। রাস্তায় নেমে সাধারণ মানুষকে এনআরসি জুজু দেখানো হচ্ছে। আমরা তো কিছু বলছি না। আসল কারণটা হচ্ছে, লোকসভা ভোটে উদ্বাস্তু হিন্দুরা আমাদের ভোট দিয়েছিলেন। সেই ভোটব্যাংকে ফাটল ধরাতেই তৃণমূল এনআরসি আতঙ্ক তৈরি করছে রাজ্যে তাদের মধ্যে। ’
তাই দুর্গাপুজোর আগেই ১ অক্টোবর কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিত শাহের কর্মীসভায় ভিড় বাড়াতে রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
উদ্বাস্তু সেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের উত্তর ২৪পরগনা, নদিয়া, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলো থেকে কর্মীদের দিয়েই নেতাজি ইন্ডোর ভরানোতে।
একাধিক সূত্র জানায়, পশ্চিমবাংলায় এনআরসি হলে একজন হিন্দুরও সমস্যা হবে না-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাবেন অমিত শাহ। ওইদিন রাতেই রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এনআরসি নিয়ে প্রচারের রণকৌশলও তৈরি করে দেবেন তিনি। তবে প্রচারের রণকৌশল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাই তৈরি করে দিন, আপাতত এনআরসি ইস্যুতে রাজনৈতিক লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বেশ এগিয়ে আছে বিজেপির থেকে।
নিয়ম করে প্রতিদিন তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ খুলছেন এনআরসি নিয়ে। দলের মাঝারি স্তরের নেতারাও ছোট ছোট জনসভা করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ‘একজনকেও রাজ্য থেকে তাড়াতে দেবে না রাজ্য সরকার। ’
অন্যদিকে, রাজ্য বিজেপি নেতারা এনআরসির পক্ষে সংগঠিত প্রচারই শুরু করতে পারেননি এখনও।
বিচ্ছিন্নভাবে বিজেপি দলীয় নেতারা বিভিন্ন জনসভায় এনআরসির কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে রাজ্যের মানুষ আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
কেননা, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘বাংলায় এনআরসি হবেই, কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর তাতে দুকোটি মানুষ বাদ যাবে। ’ বলে যে হুমকি দিয়েছিলেন তা বিজেপির জন্য হিতে বিপরীতই হয়েছে।
ফলে বিজেপি এখন মরিয়া হয়ে বোঝাতে চেষ্টা করছে যে, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হলে হিন্দুদের কোনো সমস্যা হবে না। তবে এতেও চিড়ে ভিজছে না তারা ভালোই বুঝতেই পারছে। কারণ মানুষের মধ্যে তার প্রভাব এখনও সেভাবে পড়েনি।
বরং সীমান্তবর্তী এলাকায় এনআরসির আতঙ্ক আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছে আসামের ঘটনার পর। ফলে গত লোকসভা ভোটে রাজ্যের যে সীমান্তবর্তী কেন্দ্রগুলোতে বিজেপি যথেষ্ঠ সাফল্য পেয়েছে ওইসব অঞ্চলে হিন্দু ভোটব্যাংক সংগঠিত করে।
আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে ওই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বড়সড় খেসারত গিতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা তারা ভালোই বুঝতে পারছে। আর তা বুঝতে পেরেই বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে পথে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
ভিএস/এমএ