ভক্তদের ভালোবাসায় মৃত তাপস আজ সিক্ত। অনেকের কানাঘুষো শোনা গেল, কী করতে যে রাজনীতিতে গেল! যাক সে প্রশ্ন থাক।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। ২২ বছর বয়সে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘দাদার কীর্তি’। জীবনের মোড় ঘুরে তাপস পালের। রাতারাতি বাংলার দর্শককূলের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। সাধারণ মানুষ থেকে হয়ে ওঠে নায়ক। একের পর এক হিট বাংলা ছবি দিতে থাকেন দর্শকদের।
অভিনিয়ের পাশাপাশি ২০০৯ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন তাপস পাল। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে কৃষ্ণনগর থেকে এমপি হন তিনি। শুরু হয় তার জীবনে নতুন এক অধ্যায়। কিন্তু তার কিছু কটুক্তির জন্য বেশিদিন রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি তাপস পাল।
এরপর ২০১৬ সালের শেষের দিকে 'রোজ ভ্যালি' নামে একটি চিট ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘদিন উড়িষ্যার জেলে বন্দি থাকেন তাপস পাল। রাতারাতি জনপ্রিয়তা কমে যায় তার।
বাংলার ভক্ত ও তার রাজনৈতিক দলের কাছে ব্রাত্য হয়ে পড়েন এই অভিনেতা ও রাজনৈতিক। এতটাই ব্রাত্য হয়ে যান যে একপ্রকার একঘরে হয়ে থাকতে হয় তাকে। এমনকি সেভাবে আর তাপস পালকে দেখা যেতো না কোনো অনুষ্ঠানেও।
কিন্তু মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মারা যাওয়ার খবর পেয়েই বাংলার মানুষ সব ভুলে রাজনৈতিক নয়, অভিনেতা তাপস পালকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন রবীন্দ সদনে। এখানে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ বিশিষ্টজনেরা।
তার অাগে মঙ্গলবার তার নশ্বর শরীর প্লেনে করে কলকাতায় অাসে স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। এরপর কিছুক্ষণের জন্য গলফ গ্রিনের বাড়িতে রাখা হয় মৃতদেহ। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় পিস হেভেনে।
এরপর বুধবার সকালে কফিন বন্দি দেহ রাখা হয় টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায়। সেখান থেকে তিনঘণ্টার মরদেহ নেওয়া হয় রবীন্দ সদনে। সকল ভক্তদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা এখানেই শ্রদ্ধা জানান তাকে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ জন্মালে মৃত্যু হবে, কিন্তু তারও একটা সময় অাছে। ওর অকাল মুত্যু, তাপসের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। অামি খুবই মর্মাহত, শোকাহত।
তবে এদিনও কেন্দ্রীয় সরকারের বদনাম করতে ছাড়েনি মমতা। সিবিঅাইয়ের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, একটা কেসে ওকে (তাপস) দুইবছর জেল খাটালো। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলো? ওখান থেকেই ওর শরীরটা বেশি খারাপ হয়। আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না ওর এভাবে চলে যাওয়া।
‘অামি ওর মেয়ে সোহিনী, স্ত্রী নন্দিনীসহ তার পরিবারকে সমবেদনা জানাই। তাপসকে মানুষ ভালোবাসে। বাংলার ঘরে ঘরে তাপসকে সবাই চেনে। সুতরাং তাপসের চলে যাওয়াটা চলে যাওয়া নয়। দাদার কীতি হিসেবে অমর হয়ে রইবে তাপস পাল। ’
মমতার পরিকল্পনা মতেই, মুম্বাই থেকে তাপসের মৃতদেহ অানা এবং ভক্তদের অশ্রভেজা ভালোবাসায় কেওড়া তলায় সম্পন্ন হয়েছে অন্তেষ্টিক্রিয়া।
এ সময় অনেককেই বলতে শোনা গেলো, কী দরকার ছিল রাজনীতিতে যাওয়ার তাপস পালের। তবে হাজার হাজার মানুষের শ্রদ্ধা এদিন জানান দিল মানুষ বিতর্ক মনে রাখে না। দাদার কীর্তির মতো মানুষের মনে অমর হয়ে রইবেন একজন তাপস পাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এমএ/