এমনিতে সাধারণ ঝড় বৃষ্টির পরেই প্রতিবার পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ করতে হয় শতাব্দী প্রাচীন মার্বেলের তৈরি স্মৃতিসৌধ ভিক্টোরিয়া ও তার লোহার পরীর। বিশেষ করে লক্ষ রাখতে হয় সাড়ে ছয়টন ওজনের এই পরীর ওপর।
আম্পানের পরে শহরের শিথিল লকডাউনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকলেও মন্টু দাস পর্যবেক্ষণ করতে যান মহারানীর আদরের পরীর। ঝড়ের পর সেভাবে দেখা হয়নি পরীর স্বাস্থ্য। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষের। তবে পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণের পরে মন্টু দাস সিদ্ধান্তে আসেন মহারানীর ভিক্টোরিয়ার পরী একদম ঠিক আছে। ভিক্টোরিয়ার গাছপালা ধ্বংস হলেও প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় পরী যে ঘূর্ণন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তা আগের মতোই ফের সহজ হয়ে গেছে।
পরীর প্রযুক্তি ব্যাখ্যা করে মন্টু দাস বলেন, সম্প্রতি পরীর ঘূর্ণনের জন্য নতুন গিয়ার বাক্স তৈরি করা হয়েছিল। যখন গিয়ার বক্স পাল্টানো হয় তখন ২৪ ঘণ্টার জন্য পরীর ঘূর্ণনের প্রক্রিয়া চালু রাখতে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়। যাতে পরবর্তীকালে ঘোরার সময়ে কোনো শব্দ না হয় এবং ঘূর্ণনও সহজে হয়। কিন্তু আম্পানের কারণে যান্ত্রিকভাবে নয় বরং প্রাকৃতিক কারণেই পরী ঘোরার একটা সুযোগ পেয়েছিল। ফলে যেটুকু বল বেয়ারিংয়ে জ্যাম ছিল, তা কেটে গিয়ে পরী এখন আগের মতোই ঘুরছে।
তিনি আরও বলেন, পরীর নীচে দুটি পাত্র রয়েছে। একটি পারদের এবং অন্যটি গিয়ার অয়েলের। সাধারণত যে গিয়ার অয়েল গাড়িতে ব্যবহার করা হয়। কারণ বজ্রপাতের সময়ে ওই পাত্র ভর্তি পারদ আর্থিংয়ের কাজ করে। টানা বাজ পড়তে থাকলে পাত্র থেকে পারদ ছিটকে পড়ে। তখন সেই পাত্র ফের পারদ দিয়ে পূরণ করতে হয়। আর অপর পাত্রে থাকে আট লিটারের মতো গিয়ার অয়েল। ওই তেল পরীর বল বেয়ারিং সচল রাখতে সাহায্য করে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ১৯০৬ সালে শুরু হওয়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাজ শেষ হয় ১৯২১ সালে। এরপর গম্বুজের উপরে প্রায় সাড়ে ছয়টন ওজনের ওই পরীকে ভিক্টোরিয়ার মাথায় বসানো হয়। মাটি থেকে সৌধের প্রধান গম্বুজের উচ্চতা ৫৬ মিটার। সেখানেই পরী বসে রয়েছে। পরীর উচ্চতা ৫ দশমিক ৯ মিটার।
পরীর ঘুরতে বাতাস লাগতো ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার। পরবর্তীকালে বলবেয়ারিংয়ে ক্ষয় ধরার ফলে পরীর ঘুরতে বাতাসের বেগ লাগতো ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। একসময় সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর পাল্টানো হয় পরীর গিয়ার বক্স। এরপরই আসে আম্পান। আম্পানের পরে পরীর গিয়ার বক্সের জ্যাম কেটে যায়। ফের ঘণ্টায় আগের মতো ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বাতাস পেলেই ঘুরছে। ফলে পরী সম্পূর্ণ ঠিক আছে এবং তার ঘূর্ণন শুধু ভিক্টোরিয়ার নয়, শোভা বাড়াচ্ছে গোটা কলকাতার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২০
ভিএস/এইচএডি