আজ অবধি বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৪ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এমন মন্তব্য করেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য (এমপি)।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অন্তত ৫৬টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাতেও দেখেছি, তদন্তপূর্বক দেখেছি বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে ফিনান্সিয়াল সেক্টেরে, ব্যাংকিং সেক্টরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটার মূল ব্যক্তি হলেন ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। যার কারণে সরকার তাকে সেই পদ থেকে অপসারণ করেছে। কিন্তু আজ অবধি বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত যতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি শুধুমাত্র কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের সেই মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন যে চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু তার বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো দুর্নীতির মামলা আনা হয়নি।
‘যদিও তার স্বেচ্ছাচারিতা এবং একক সিদ্ধান্ত বিভিন্নভাবে ঋণগুলোর ব্যাপারে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেটা আমাদের স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন তদন্তের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে। ’
বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যানকে নিয়ে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি কয়েকদফা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। তাই আমরা মনে করি, জাতি মনে করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান আরম্ভ করেছেন, শুদ্ধি অভিযান আরম্ভ করেছেন, সে প্রেক্ষিতে দুদকের এ বিষয়ে জবাবদিহিতা অত্যাবশ্যকীয়, কেন এখন পর্যন্ত তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর ব্যাপারে কোনো মামলা করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জাতি জানতে চায়।
এ বিষয়ে দুদকের ব্যর্থতা বা দুদকের চেয়ারম্যানের ব্যর্থতা বলতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, অবশ্যই, আমি এ কারণে গতকাল (একটি সভায়) বলেছি দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন যে, তিনি কোনো প্রভাবের কারণে এ ব্যবস্থা নেননি তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। তিনি যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন।
‘আর যদি উনি মনে করেন যে, না; তিনি কোনো প্রভাব দ্বারা বা কারো কথায় কোনো প্রভাবিত হবেন না তাহলে অবশ্যই জাতি মনে করে, আমরা মনে করি শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করো, তাকে গ্রেফতার করো, জিজ্ঞাসাবাদ করো, দুর্নীতি দমন কমিশন আশু পদক্ষেপ নেবে।
দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য এ কথাগুলো বলেছেন বলেও জানান ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, চেয়ারম্যান (দুদক) একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থার চেয়ারম্যান। উনার চেয়ারম্যানশিপ নির্ধারণ করা হয় বাছাই কমিটির মাধ্যমে। সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে বাছাই কমিটির মাধ্যমে। এটা চেয়ারম্যানের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, উনি পদত্যাগ করবেন কিনা। সেটা তো আমি জানি না। সেটা একান্ত উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
তিনি বলেন, ‘শেখ ফজলে নূর তাপস সাহেবের বক্তব্যটা আমরা এপ্রিশিয়েট করছি। উনি চাচ্ছেন বেসিক ব্যাংকের চার্জশিট হোক। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বা একজন নাগরিক হিসেবে একজন সচেতন আইনজীবী হিসেবে উনি চাইতে পারেন। এটা এপ্রিশিয়েট করি। এটা (চার্জশিট) কেন হচ্ছে না?’
‘কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান (দুদক চেয়ারম্যান) সাহেব বলেছিলেন, এখানে ৪ হাজার কোটি টাকার বিষয়। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি অনেক টাকা উদ্ধার হওয়ার পথে। মানিলন্ডারিং মামলার প্রধান বিষয় টাকার উৎস এবং টাকাটা কোথায় গেলো সে ব্যাপারটা আইডেন্টিফিকেশন পর্যায়ে আছে। এখন টাকার যদি গন্তব্য বের করা না যায়, তাহলে তো এ চার্জশিট আদালতে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তার মানে এই না যে অনন্ত কাল পর্যন্ত চার্জশিট হবে না। আমি যতটুকু জানি টাকার গন্তব্য ফাইন্ডআউট হলে এটা হয়ে যাবে। এটা এক্সাক্টলি টাইম বলা ডিফিকাল্ট। ৫৬টি মামলা। আরও কিছু হচ্ছে। ’
চার্জশিটে আব্দুল হাই বাচ্চুর নাম থাকবে কি-না এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, উনার সংযুক্তি থাকলে অব্যশই হওয়া উচিৎ। যদি ক্রেডিবল এভিডেন্স থাকে তাহলে অবশ্যই আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪,২০১৯
ইএস/এমএ