ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: কায়সারের আপিল শুনানিও শেষ পর্যায়ে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৯
মানবতাবিরোধী অপরাধ: কায়সারের আপিল শুনানিও শেষ পর্যায়ে

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষের শুনানির পর আগামী ১৮ নভেম্বর এ আপিলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। 

এ বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, সৈয়দ কায়সারের মামলা শুনানির চূড়ান্ত পর্যায়ে। আসামি পক্ষ তাদের বক্তব্য শেষ করেছে।

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য ১৮ দেবো ১৮ তারিখ। এটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।

গত ১০ জুলাই কায়সারের আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। এ মামলায় কায়সারের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী হবিগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৫২ জনকে হত্যা, ২ নারীকে ধর্ষণ, ৫ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়, দুই শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান কায়সার। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের দু’টি অপরাধ প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে। ওই দুই বীরাঙ্গনা নারী ও ধর্ষণের ফলে বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। সে সময় সাক্ষ্য দেওয়ায় যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহারকে সাহসিকতার জন্য এবং সব নির্যাতিত নারী ও বীরাঙ্গনাদের স্যালুট জানান ট্রাইব্যুনাল।

২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির সাজা বাতিল ও বেকসুর খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেন কায়সার। ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিলের পক্ষে মোট ৫৬টি যুক্তি দেখান তিনি।

কায়সারের বিরুদ্ধে ৪৮৪ পৃষ্ঠার ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০ থেকে ৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করতে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন। তিনি নিজে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ‘কায়সার বাহিনী’ নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফর্মও ছিল। এ বাহিনীর মাধ্যমে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। কায়সার পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালান।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
ইএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।