এর মূলে রয়েছে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। যা ব্যবহার করে দলের নেতৃত্ব সারা জীবন হাতে রাখার মিশনে নেমেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল আলম প্রামাণিক ও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই ভাগে বিভক্ত মান্দা বিএনপির এক ভাগের নেতৃত্বে আছেন সাবেক এমপি ও থানা বিএনপি সভাপতি শামসুল আলম প্রামাণিক ও থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মখলেসুর রহমান মকে। অন্য ভাগের নেতৃত্বে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ইকরামুল বারী টিপু ও থানা কমিটির আর এক সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম চৌধুরী।
দলীয় এ বিভক্তির বিষয়ে ডাক্তার ইকরামুল বারী টিপু বাংলানিউজকে বলেন, ১২ বছর ধরে দলে এই অনৈক্য বিদ্যমান। একমাত্র শামসুল আলম প্রামাণিকের একঘুঁয়েমির কারণেই দলে এই অনৈক্য। তিনি নতুন নেতৃত্বকে পাশ কাটিয়ে চলতে চান। নতুন নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জকে তিনি ভয় পান। এ কারণেই এ আসনে দলীয় কোন্দলের পরও আওয়ামী লীগের অবস্থান বিএনপির চেয়ে ভালো। কিন্তু বিএনপির অবস্থা আরো করুন।
তিনি বলেন, এই অনৈক্য তৈরি হয়েছে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। ২০০৪ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকাকালে খুন হন মান্দা থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মনসুর মৃধা। সে সময় এ অঞ্চলে সর্বহারাদের দাপট ছিলো। ধারণা করা হয়, সর্বহারাদের হাতেই খুন হন মনসুর মৃধা। কিন্তু ঘটনার ১০ মাস পর তখনকার এ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল আলম প্রামাণিক ও সে সময়ের থানা কমিটির সভাপতি চৌধুরী মখলেসুর রহমান মকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে আমাকে সেই মামলার প্রধান আসামি করেন। আমি তখন থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। যদিও মামলার রায়ে আমি বেকসুর খালাস পাই।
কিন্তু একমাত্র সভাপতি ছাড়া সেই কমিটির কেউই এ বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এরপরই দল দুই ভাগ হয়ে যায়। দলের সব দায়িত্বশীল নেতা আমার পক্ষে চলে আসেন। সেই থেকে দল দুই ধারায় পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে একটি পকেট কমিটির মাধ্যমে দল পরিচালনা করছেন শামসুল আলম প্রামাণিক।
টিপু বলেন, ওই পকেট কমিটি ঘোষণার পরই আমি দলীয় নেতাদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে যাই। ম্যাডাম আমাদের কথা শুনে জেলা কমিটির বিভিন্ন পদে আমাদের পজিশন দেন এবং দ্রুত নতুন থানা কমিটি করবেন বলেও কথা দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আমাদের প্রার্থীরা বেশি মনোনয়ন পেয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইবো। তবে এ অবস্থায় জয়ী হওয়া কঠিন। দল একতাবদ্ধ হলে জয়ী হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ বর্তমান সংসদ সদস্য একজন মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এলাকায় কোন উন্নয়ন করেননি।
এ আসনে আর এক মনোনয়ন প্রত্যাশী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম চৌধুরী দলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে দলে কোন ইউনিটি নাই। সাবেক এমপি দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। গত উপজেলা নির্বাচনে তার ভুল প্রার্থী বাছাইয়ের খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। এটা জামায়াতের এলাকা না হলেও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসন বিএনপি হারিয়েছিল কেবল ভুল প্রার্থী বাছাইয়ের কারণে। তবে বিএনপি যদি একতাবদ্ধ হয়ে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে যে কোন পরিস্থিতিতেই দল জয়ী হবে।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান থানা কমিটির সভাপতি শামসুল আলম প্রামাণিক বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার অনুসারী বলে পরিচিত এবং বর্তমান থানা সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মখলেসুর রহমান মকে বাংলানিউজকে বলেন, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না, এমনকি দল নিয়ে কোন কথাও বলবেন না।
তিনি বলেন, ঢাকায় বড় বড় নেতারা বসে আছেন। তারাই সেখান থেকে মনোনয়ন দেন। তারা এসব বুঝবেন।
এ আসনে বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-ডাক্তার ইকরামুল বারী টিপু, মাহাবুব আলম চৌধুরী, আব্দুল মতিন, ইঞ্জিনিয়ার আক্কাস আলি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এএটি/জেডএম/