ধামুরহাট ও পত্নীতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে দলে তার তেমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকলেও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি লড়বেন তার এই ধসে যাওয়া ইমেজের সঙ্গে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্টকারী স্থানীয় জুলুমবাজরাই এখন হুইপের সবচেয়ে কাছের মানুষ।
ধামুরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, গত আট বছরে আমূল পাল্টে গেছে ধামুরহাট ও পত্নীতলা উপজেলার উন্নয়নের চিত্র। দুই উপজেলার প্রতিটিতেই প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার ওপর উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। বর্তমানে ধামুরহাট উপজেলায় ৩৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। এলাকার প্রায় সব রাস্তাই পাকা হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগও প্রায় সবখানে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নে জনগনের মনে কোনো হাসি ফোটাঁনো যাচ্ছেনা।
ধামুরহাট আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ হুইপের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ধামুরহাট থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক সরকার, ১ নং ধামুরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান, থানা যুবলীগ সভাপতি জাবিদ হোসেন মৃদু, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুর রহমান, ৩ নং আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেনসহ একদল স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে হুইপ একটি চক্র তৈরি করেছেন এই চক্রই পুরো উপজেলায় তৈরি করেছে এক ত্রাসের রাজত্ব। যার কাছে একেবারেই অসহায় সাধারণ কর্মী ও ভোটাররা। এই চক্র উপজেলার সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজে নিয়োগ, বালুমহাল, সরকারি বনভূমি ও খাসজমি দখল, সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষকের মতে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের পেটোয়া বাহিনীর কারণে সরকারের এই ব্যাপক উন্নয়ন কোনো কাজেই আসবে না। এদের অত্যাচারে মানুষ অতীষ্ট ও আওয়ামী লীগের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। হুইপের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তিনি তার কাছের মানুষদের ওপর কঠোর হতে পারেন না।
এদিকে একই চিত্র চোখে পড়ে নওগাঁ-২ আসনের অপর উপজেলা পত্নীতলাতেও। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, হুইপ এখানে যেমন ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, তেমনি এক ভীতিকর পরিবেশও তৈরি করেছেন। কেউই তার বিরুদ্ধে টু শব্দ পর্যন্ত করতে পারবে না। তিনি এখানকার নেতৃত্ব নিজ হাতে ধরে রাখার জন্য বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুর্ধর্ষ ক্যাডারদের দলে জায়গা দিয়েছেন। এতে মূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়েছেন। ফলে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
হুইপের হাত ধরে তিনি বিএনপির কাজী ছবেদুল, সাবেক বিএনপির এমপি শামসুজ্জোহা খানের ঘনিষ্ট নজরুল, লিটন, বিতর্কিত জাপা নেতা আব্দুল গফফারকে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন। তারই হাত ধরে জাপার আরো এক নেতা আব্দুল খালেক চৌধুরী থানা কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি হয়েছেন।
বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বহিরাগত এইসব নেতাকর্মী ছাড়াও হুইপের পেটোয়া বাহিনীতে রয়েছে তার আরো কিছু কাছের মানুষ। তিনি সব সময়ই এই বলয় দ্বারা বেষ্টিত থাকেন। এই চক্রটির অপকর্মে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে ব্যাক্তি শহীদুজ্জামানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তেমনি নষ্ট হচ্ছে আগামী নির্বাচনে এই আসনটি আওয়ামী লীগের ধরে রাখার সম্ভাবনা।
এ অবস্থায় এরইমধ্যে স্থানীয় ভাবে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক সচিব কাজিমদার ওয়ালিউর রহমান, প্রকৌশলী আকতারুল আলম, জেলা কমিটির বন ও পরিবেশ সম্পাদক এবং পত্নীতলা থানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হকের নাম।
এ আসনের তৃণমূল মানুষের দাবি ২০০১ সালের নির্বাচনে তারা শহীদুজ্জামান সরকারকে বিএনপির সংসদ সদস্য শামসুজ্জোহা খানের বিপক্ষে ভোট দিয়ে ২৬ হাজার ভোটে নির্বাচিত করেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন ৪৯ হাজার ভোটে। এরপর থেকে হুইপের পাশে ভিড়তে শুরু করে দুধের মাছিরা। এইসব সুবিধাভোগীরা হুইপকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু হুইপের বিপদের দিনে তারা কেউই পাশে দাড়াবেনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে হুইপকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারন এই আসনে কেউই পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে বিনা ভোটে দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার বিরল সম্মান তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সম্মান তিনি রাখতে পারেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৭
আরএম/বিএস
** নওগাঁ-৪: এক মার্ডারেই তছনছ বিএনপি
** নওগাঁ-৪: ইমাজ প্রামাণিকেই নড়বড়ে আওয়ামী লীগ
** নওগাঁ-৪: ইমাজের ইমেজ নষ্ট পাঁচ পাণ্ডবে